Showing posts with label কিছু বিভ্রান্তি. Show all posts
Showing posts with label কিছু বিভ্রান্তি. Show all posts

Thursday, July 4, 2013

কিছু বিভ্রান্তির জবাব


হানাফী মাযহাব নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি এবং তার জবাব...................

কিছু দিন আগে আমার একভাই আমাকে হানাফী মাযহাব সম্পর্কে তিনটি প্রশ্ন করেন এবং আমি আগেও দেখেছি যে, এই প্রশ্নগুলো নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকেআমি তাকে যেভাবে উত্তর দিয়েছি সেভাবেই উত্তরটি কপি-পেষ্ট করে দিলাম

প্রশ্নগুলো হল.......

ইমাম আবু হানাফী রঃ এর জন্ম ৮০ হিঃ এবং মৃত্যু ১৫০ হিঃফিকাহ গ্রন্থ কুদরী লেখা হয় ৩৬২ হিঃইমাম আবু হানাফী রঃ এর ৪ জন প্রসিদ্দ ছাত্র ১)আবু ইউসুফ রঃ. ২)মুহাম্মাদ রঃ৩)ইমাম যুকারা রঃ. ৪)হাসান বিন জিয়াদ রঃ. । আমার প্রশ্ন আপনার কাছে :

 ১) ১৫০ হিঃ থেকে ৩৬২ হিঃ এর সনদ অর্থাৎ রাবী গুলার নাম বলবেন?

২) আবু ইউসুফ রঃ ও মুহাম্মাদ রঃ, ইমাম আবু হানাফী রঃ এর ২-৩ অংশ ফতুয়ার বিরধীতা করেন কেন ?

৩) ইমাম আবু হানাফী রঃ এর কোন হাদিস গ্রন্থ এর নাম বলেন যেটা থেকে অনার মতআমত পাওয়া যাবে

উত্তর....

আপনি বলেছেন,
ফিকাহ গ্রন্থ কুদরী লেখা হয় ৩৬২ হিঃ। .... ১৫০ হিঃ থেকে ৩৬২ হিঃ এর সনদ অর্থাৎ রাবী গুলার নাম বলবেন?

ভাই আপনার কুদুরীর সনদের প্রয়োজন হয়েছে কেন? আপনি কি মনে করেন, ফেকহে হানাফীতে প্রথম কুদুরী লেখা হয়েছে? এর আগে ও কিন্তু কিতাব লিখা হয়েছে
যেমন: ইমাম আবু হানিফার ছাত্র ইমাম মোহাম্মদ নিজেও অনেক কিতাব লিখেছেনসিয়র কবীর, সিয়রে সগীর, কুতুবুস্ সুন্নাহ (জাহেরুর রেওয়ায়াত) ৪জিয়াদাত ৫জামে কবীর ৬জামে সগীরসবচেয়ে বড় কথা হল ইমাম শাফী রা: ও ইমাম মোহাম্মদ থেকে হাদীস রেওয়ায়ত করেছেন

আপনি প্রশ্ন করেছেন
ইমাম আবু হানিফা রাহ: এর ছাত্রগণ ওনার বিরোধিতা করেছেন কেন?

সব মাছালাই বিরোধিতা করেনি, তবে যে সব মাছালাই ইমাম আবু হানিফার মতামতকে কোরান হাদিসের বিপক্ষে পেয়েছেন সেখানে বিরাধিতা করেছেনপরবর্তিতে ওলামাগণ দেখেছেন বিরোধিতা করলেও কোন কোন স্থানে ইমাম আবু হানিফার মতামত ঠিক ছিল, আবার কোন কোন জাগায় আবু ইউচুফ বা ইমাম মোহম্মদ রাহ: এর মতামত ঠিক ছিলযেখানে যার মতামত টিক ছিল সেখানে তার মতামতের উপর ফতওয়া দেয়া হয়েছেএকে বলা হয় হানাফীরা অন্ধ বিশ্বস করেনাআপনি কি বলেন আমরা অন্ধ বিশ্বাস করব এবং ভুল হলেও মেনে নেব?

আপনি বলেছেন,
ইমাম আবু হানাফী রঃ এর কোন হাদিস গ্রন্থ এর নাম বলেন যেটা থেকে অনার মতআমত পাওয়া যাবে

আমি প্রশ্ন করি হযরত আবু বকর ওমর ওসমান আলি রা: কোন হাদিসের কিতাব লিখেছেন যেখান থেকে কোন হাদিস জাল কোন হাদিস যইফ তা জানতে পারতামঅবশ্যয় লিখেননিওনারা যেকারনে লিখেন নি, সে কারনে ইমাম আবু হানিফাও লিখেন নি
কারণ টা কি?

ছাহাবা যুগ যাকে হাদীসে খায়রুল কুরুন বলেছে সে যুগে হাদীস জাল বা জঈফ হয়নি, যার কারণে হাদস সংকলনের প্রয়োজন দেখা দেয়নি বরং হাদীস উস্তাদ থেকে শুনে শুনে মুখস্থ রাখা হইতইমাম আবু হানিফা সেই যুগেরই মানুষ ছিলেনঅর্থাত উনি সাহবা এবং তাবঈদের থেকে হাদীস শিক্ষা গ্রহণ করেচেনপরের ‍যুগে যখন হাদিস জাল করা শুরু হয় তখন ইমাম আহমদ, ইমাম বোখারী প্রমুখ ব্যক্তি হাদীস সংকলনের কাজ শুরু করেন

হাদিস শরীফে আছে : মুসলিম শরীফের রেওয়ায়াত
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ( لا تَكْتُبُوا عَنِّي وَمَنْ كَتَبَ عَنِّي غَيْرَ الْقُرْآنِ فَلْيَمْحُهُ وَحَدِّثُوا عَنِّي وَلا حَرَجَ ... ) رواه مسلم
হুযুর পাক সা: বলেন: তোমরা আমার থেকে কোরান অন্য কিচু লিখবেনাযদি লিখে থাক তাহলে মুছে ফেলকিন্তু আমার থেকে রেওয়ায়াত কর
এই হাদিসে কোরান ছাড়া অন্য কিছু লিখতে নিষেধ করা হয়েছেএর উপর ছাহাবাগণ আমল করেছেন, ইমাম আবু হানিফাও আমল করেছেন

উনারা হাদিসের উপর আমল করাতে আপনার কোন অসুবিধা হইলে জানাবেন

ইমাম আবু হানিফা রাহ: নিজে কোন কিতাব লিখেননি সংকলনের কাজে ব্যস্ত থাকার কারনেতবে ওনার ছত্ররা ওনার রেওয়ায়ত সমুহ একত্রিক করেছেন
যেমন :
1الفقه الأكبر، برواية حماد بن أبي حنيفة
لفقه الأكبر، برواية أبي مطيع البلخي(2)
العالم والمتعلم، برواية أبي مقاتل السمرقندي(3)
رسالة الإمام أبي حنيفة إلى عثمان البتي(4)
الوصية، برواية أبي يوسف(5)

 ...........................................................................................................
পাঠকরা যদি ইচ্ছা করেন তবে উক্ত প্রশ্নগুলো সাধারনত যারা করেন আপনারা তাদের সম্পর্কেও জানতে পারেন.....

http://www.peaceinislam.com/asksumon007/11623/

Read more ...

Saturday, April 7, 2012

একটি সহজ সরল মূল্যায়ন: কুরআন-সুন্নাহ থাকতে আবার আমরা মাযহাব কেন?

আজ এই মুহূর্তে আপনি ইসলাম গ্রহণ করলেন কিংবা আপনি জন্মগতভাবেই মুসলিম, এ মুহূর্তে আপনি ইসলামের কোনো বিধান পালন করতে চান, তো আপনাকে আলেম-উলামা বা ইসলাম সম্পর্কে জানেন-এমন ব্যক্তির শরণাপন্ন হতে হবে। আমাদের এই ভূখন্ডে প্রথম দিকে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তারা ঈমান শিখেছিলেন ইসলাম-প্রচারকদের কাছে। এরপর তাদের কাছেই নামায আদায় করতে শিখেছিলেন। আজ এবং অনাগত দিনেও পৃথিবীব্যাপী প্রতিটি নওমুসলিমই ঈমান, অযু-গোসল, হালাল-হারাম, সালাত-যাকাত, সিয়াম-হজ্ব ইত্যাদির প্রথম ধারণা লাভ করবেন তার ইসলাম গ্রহণের প্রথম মাধ্যম ব্যক্তিটির কাছ থেকে এবং বহু কিছু তিনি শিখে নিবেন মুসলিমসমাজের ধর্মীয় কার্যক্রম ও কালচার থেকে। এ বিষয়টি আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারব যদি কল্পনা করি সে সময়টির কথা, যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এত উন্নত হয়নি। শিক্ষা-দীক্ষার হার ছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। তথ্য ও যোগাযোগ মাধ্যম বলতে তেমন কিছুই ছিল না। ছিল না এত বই-পুস্তক, পত্রিকা ও প্রকাশনা। তখন ভাবের আদান-প্রদান ও যোগাযোগের একটিই উপায় ছিল। তা হল মৌখিক জ্ঞান বিনিময়ের পাশাপাশি বাস্তব অনুশীলন। অর্থাৎ হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া।

আজকের এই সময়টা নিয়েই ভাবুন। দেখবেন, বাংলাদেশের মুসলমানরা ইসলামী বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা, ইবাদত-বন্দেগী, সুন্নত-বিদআত, জায়েয-নাজায়েয, হালাল-হারাম প্রভৃতি যা কিছুই জানেন এর সিংহভাগই সমাজ, পরিবেশ, গৃহশিক্ষক, মসজিদের ইমাম, ওয়ায়েজ, মক্তবের উস্তাদ, মা-বাবা, দাদা-দাদী ইত্যাদি মানুষ থেকে শেখা। কেবল নিজের পড়াশোনা, প্রচারমাধ্যম বা অন্যান্য ব্যক্তিগত অনুসন্ধান থেকে ধর্মীয় জ্ঞান লাভ করেছেন এমন মানুষের সংখ্যা এ দেশে এখনও অনেক কম।

আমাদের সমাজের প্রকট বাস্তবতার আলোকেই বাঙ্গালী মুসলমানের প্রথম ইসলামী জ্ঞান অর্জনের এ ব্যবস্থাকে অবলম্বন করেই প্রবচন চালু হয়েছে-শুইন্যা মুসলমান। অর্থাৎ মূল উৎস ঘেঁটে, দেখে বা পড়ে নয়, শুনে শুনে যারা একটি বিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে ধারণ করেছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রেই এ প্রবচনটি প্রয়োগ করে থাকেন গ্রাম-বাংলার মানুষ।

কেবল বই-পুস্তক পড়ে একটা কাজ শেখা আর একজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে হাতে-কলমে শিক্ষালাভ করার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ আছে। কোনো খেলা, ব্যায়াম, সাইকেল বা গাড়ি চালনা কোনোটাই শুধু বই-পুস্তক পড়ে, মিডিয়ায় ছবি দেখে পূর্ণরূপে শিখে নেওয়া সহজ নয়। একজন উস্তাদের সাথে থেকে তার ইনস্ট্রাকশন মেনে বিষয়টি শিখলে এবং হাতে-কলমে অনুশীলন করলে পুঁথিগত জ্ঞান বা তাত্ত্বিক ব্যাকরণ ততটা না জানলেও কাঙ্খিত কার্যক্রমটুকু শিখে নেওয়া সম্ভব। পড়াশোনার বিষয়টি ব্যবহারিক পর্যায়ে থাকলেও কাজ বাধাগ্রস্ত হবে না। গভীর তত্ত্ব আলোচনা ও সামগ্রিক জ্ঞান অনুসন্ধান বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের জন্য জরুরি হলেও বিশ্বাস, দর্শন ও জীবনব্যবস্থার সাধারণ অনুসারীর প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ওই প্রশিক্ষক, গুরু, পীর, উস্তাদ, মুর্শিদ, আলেম, ইমাম বা প্রচারকের সান্নিধ্যই যথেষ্ট।

বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ও আল্লাহর মনোনীত একমাত্র দ্বীন ইসলামের প্রচার তত্ত্বের চেয়ে ব্যবহারিক পর্যায়েই বেশি অগ্রসর হয়েছে। কেননা, পৃথিবীর সকল অঞ্চলের সকল যোগ্যতার মানুষকে তাওহীদ, রিসালত ও আখেরাতের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত জীবনব্যবস্থার দিকে দাওয়াত দিতে চাইলে কোনো কঠিন ও জটিল পন্থা অবলম্বন করা চলবে না। হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর সরল ও সনাতন পন্থায়ই তা করতে হবে।

হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে জীবনের প্রতিটি বিষয় হাতে-কলমে শিক্ষা দিয়েছেন, কোনো বই-পুস্তক ধরিয়ে দিয়ে গবেষণা করে বুঝে নিতে বলেই দায়িত্ব শেষ করেননি। পৃথিবীর অপরাপর এলাকায় বসবাসরত সমকালীন মানুষ এবং পরবর্তী সকল যুগের অনাগত বিশ্বমানবমন্ডলীর কাছে নিজের দাওয়াত পৌঁছে দিতেও হযরত বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকা, পান্ডুলিপি ইত্যাদির আশ্রয় নেননি। তিনি তাঁর সাহাবীগণকে দায়িত্ব দিয়েছেন বিশ্বময় ছড়িয়ে পড় এবং আমার আদর্শের একটি বাণী হলেও পূর্ব-পশ্চিমে বসবাসরত প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দাও।

হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন বলতেন, তোমরা আমাকে যেভাবে নামায পড়তে দেখ সেভাবে নামায পড়, সাহাবীরা যেমন নতুন কোনো মানুষকে অযু শেখানোর সময় তাদের সামনে বসে অযু করতেন এবং বলতেন, এই ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অযু। ইসলামের প্রতিটি বিধানই প্রাথমিকভাবে এর ধারক-বাহকদের মাধ্যমে ব্যবহারিক তথা প্রায়োগিকভাবেই বিস্তৃত ও প্রচলিত হয়েছে। আর ইসলামের সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্ব বা এর অন্তর্নিহিত শক্তিও এখানেই যে, এটি ধারণ বা পালন না করে বহন করা যায় না। আর একে ভালো না বেসে ধারণও করা যায় না। যারা একে ভালবাসেন ও নিজেরা ধারণ করেন, তারাই কেবল একে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারেন। এর আনুষ্ঠানিক প্রচারের তুলনায় এর ধারক ও সেবকদের আন্তরিকতা ও কল্যাণকামিতার মাধ্যমেই ইসলাম অধিক, ব্যাপক, গভীর আর টেকসই পর্যায়ে বিস্তৃত হয়েছে। দেড় হাজার বছরের ইতিহাসই এর সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট।

এখন ইসলামের একজন অনুসারী হিসেবে আমি নিজেকে নিয়েই চিন্তা করি। ইসলামের একজন প্রচারক যখন আমার কাছে ইসলামের আদর্শ তুলে ধরবেন, সে সময়টা যদি হয় আরও ২, ৪, ৫, ৭ শ বছর আগের, তখন কি তার পক্ষে সম্ভব আমার হাতে এক কপি কুরআন বা সহীহ হাদীসের একটি পূর্ণাঙ্গ সংকলন তুলে দেওয়া? বাংলাভাষী হওয়ায় আমার পক্ষে কী আরবী ভাষায় তা পাঠ করাও সম্ভব? শুধু আরবী ভাষা বলেই কথা নয়, আমার পক্ষে কি তাত্ত্বিক এ দুটো উৎস-বিদ্যার বিষয়গত ভাব উদ্ধার করাও সম্ভব? এখানে আমার জ্ঞান-গরিমার পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক অবস্থা, বোধ-বিবেকের পরিমাণও একটি প্রশ্ন। এরপর বহু সাধনা করে কুরআন-সুন্নাহর ভান্ডার হাতে পেয়ে গবেষণা করে এর সারনির্যাস হাসিল করে নিজে ঈমান, আমল ও আখলাক চর্চা শুরু করতে আমার কত মাস, বছর বা যুগ লাগবে সেটাও কি কম বড় প্রশ্ন ? এতটা পরিশ্রম করে যদি ইসলাম পালন আমি শুরু করি, তাহলেও তো ভালো। কিন্তু এ কাজটুকু কজন মানুষের পক্ষে সহজ বা সম্ভব? তদুপরি প্রশ্ন দেখা দেবে যে, কুরআন-সুন্নাহ গবেষণা করে ঈমান-আমল, নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত, বিয়ে-শাদি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ঋণ-উৎপাদন, দান-খয়রাত, জীবন-মৃত্যু, জানাযা-উত্তরাধিকার ইত্যাদি শুরু করার আগ পর্যন্ত আমার মুসলমানিত্বের এ দীর্ঘ সময়ের নামায-বন্দেগী ও কাজকর্মের কী হবে?
আমার তো মনে হয়, কোনো ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠীর ঈমান ও আমলের জন্য, ইসলামী জীবনবোধ ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য প্রথম দিনই কুরআন ও সুন্নাহ গবেষণা শুরু করার পদ্বতি ইসলামের স্বাভাবিক রীতি নয়। যদি এই না হবে তাহলে আমার সন্তানকে আমি ঈমান শেখাব কী করে? তাকে নামায, যিকর, সবর, শোকর, তাওয়াক্কুল ও আদব-আখলাক আমি কোন অধিকারে শিক্ষা দেব? যদি সে প্রশ্ন তোলে, আববু! তুমি আমাকে কুরআন ও সুন্নাহ শেখাও কেন? কুরআন-সুন্নাহ থেকে আমিই আমার জীবনবিধান খুঁজে নেব। তুমি এর মধ্যে এসো না। তুমি তোমার প্রায়োগিক আচরণ ও পর্যবেক্ষণ আমার ওপর চাপাতে চেষ্টা করো না। আমি তোমার বা তোমাদের মাযহাব মানি না। আমার দায়িত্ব তো কুরআন-সুন্নাহর ওপর আমল করা। অতএব কুরআন-সুন্নাহর ওপর দখল স্থাপন করার সময় আমাকে দাও। এরপরই আমি শরীয়তের ওপর আমল শুরু করব। পুত্রের এসব যুক্তির পর আমার বলার কি কিছু থাকবে?
পুত্রের এ বক্তব্য যে ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত সে ভিত্তিই আমাকে কথা বলার সুযোগ দেবে। কারণ মহান আল্লাহ তাঁর দ্বীনের প্রচার ও শিক্ষাকে যে সনাতন ও স্বাভাবিক পদ্ধতিতে প্রচলিত ও বিস্তৃত করেছেন, এর সম্পূর্ণ অনুরূপ হচ্ছে আমার এ উদ্যোগ।

আমার পুত্রকে ইসলামী জীবন-বিধান শিক্ষা দেওয়া আমার ওপর শরীয়তের নির্দেশ। আমি তাকে আল্লাহর পরিচয়, আল্লাহর শক্তি, প্রীতি, ভীতি ও ভালবাসা শেখাব। তাকে হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহত্ত্ব, অবস্থান ও অপরিহার্যতা সম্পর্কে ধারণা দেব। তাকে নামায শেখাব। খাওয়া-পরা, ঘুম-বিশ্রাম, প্রস্রাব-পায়খানা, প্রবেশ-প্রস্থান, মসজিদে যাতায়াত, আযানের জবাব, হাঁটা-চলা, সালাম, মোসাফাহা ইত্যাদির ইসলামী নিয়ম শিক্ষা দেব। আমি নিজেও অযু-গোসল, রোযা-নামায, দাম্পত্য জীবন, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন, হজ্ব-কুরবানী প্রভৃতি যথাযথ নিয়মে পালন করব। অথচ আমি কুরআন বা হাদীস পড়ার বা বুঝার মতো যোগ্যতা রাখি না। জ্ঞানের এ দুই মহাসমুদ্র পাড়ি দিয়ে আমার দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান হস্তগত করে আমল করার মতো শিক্ষা, মেধা, মানসিক যোগ্যতা বা সামগ্রিক অবস্থা আমার নেই, এমতাবস্থায় আমার কী করণীয়?

আমার তো মনে হয়, এখানে আমার ও আমার পুত্রের একই ধরনের করণীয়, যা ইসলামের ১৫০ কোটি সমসাময়িক অনুসারীর প্রত্যেকেরই করণীয়। আর তা হল, কুরআন-সুন্নাহ ও ইজমা-কিয়াস থেকে গৃহীত ইসলামী বিধিবিধানের প্রায়োগিক রূপ ফিকহের অনুসরণ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন বলেছেন, একজন ফকীহ শয়তানের মোকাবেলায় এক হাজার আবেদেরও চেয়েও শক্তিশালী। এর কারণ সম্ভবত এটিও যে, এক হাজার সাধারণ মুসলিমকে ধর্মীয় বিষয়াদি নিয়ে সংশয় উদ্বেগ ও বিভ্রান্তিতে ফেলে দেওয়া শয়তানের জন্য যত না কঠিন একজনমাত্র শরীয়ত-বিশেষজ্ঞ ফকীহ আলেমকে বিভ্রান্ত করা এরচেয়ে বেশি কঠিন। কেননা, এই ব্যক্তির কাছে কুরআন ও সুন্নাহর শক্তিশালী সম্পদ রয়েছে। রয়েছে ইলমে দ্বীনের আরও বিস্তারিত ভান্ডার।

কুরআন মজীদেও আল্লাহ তাআলা এ মর্মে বলেছেন, প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর মধ্য হতে একদল মানুষ যেন দ্বীনী ইলমের উপর ব্যুৎপত্তি অর্জন করে কারণ জনগোষ্ঠীর বাকি অংশটিকে তাদের শরীয়তের উপর পরিচালনা করতে হবে। এখানেও আমরা ফকীহ বা শরীয়তের আলেমের বিধিগত অস্তিত্ব এবং তাঁর কুরআনী দায়িত্ব উপলব্ধি করতে পারি।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মহামান্য সাহাবীগণের পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার পর ইসলাম যখন আরব-উপদ্বীপ ছেড়ে একদিকে সাহারা গোবি ছুঁয়ে দূর অতলান্তিক স্পর্শ করছিল, অপরদিকে আসমুদ্র সাইবেরিয়া আর মহাচীনের প্রাচীর পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছিল তখনও কিন্তু পবিত্র কুরআন ব্যাপকভাবে হস্তলিখিত হয়ে এত বিপুল পরিমাণ অনুলিপি তৈরি হয়নি, যা প্রতিটি শিক্ষিত নও-মুসলিমের হাতে তুলে দেওয়া যায়। আর হাদীস শরীফ তো তখনও যাচাই বাছাইয়ের পর সংকলিত ও গ্রন্থবদ্ধ হয়েও শেষ হয়নি। তো ইসলামের এ অগ্রযাত্রা, ইসলামী শরীয়তের আলোয় প্লাবিত এ নতুন পৃথিবীর বুকে কাদের মাধ্যমে কুরআন-সুন্নাহর আলো প্রতিবিম্বিত হয়েছিল? এর ছোট এক টুকরো জবাবই ইসলামের ইতিহাসে সুরক্ষিত আছে, যা আমি এ লেখার শুরুতে নিবেদন করেছি। হাদীস শরীফে তো বলা হয়েছে, তোমাদের মাঝে দুটি বিষয় আমি রেখে গেলাম। যতদিন তোমরা এ দুটো আঁকড়ে রাখবে ততদিন পথচ্যুত হবে না। এক আল্লাহর কিতাব। দুই. আমার আদর্শ। এ মহা দিকনির্দেশনার আরও সুসংহত রূপ হচ্ছে হযরতের অপর বাণী, যেখানে মুসলিম জাতিকে সত্যপথের দিশা দিতে গিয়ে বলেছেন, যে আদর্শের উপর আমি রয়েছি আর আমার সাহাবীগণ রয়েছেন। অন্যত্র বলেছেন, তোমাদের জন্য অবধারিত করছি আমার এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শের অনুসরণ।

এখানে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে, ইসলামী অগ্রযাত্রা ও ইসলামী জীবনসাধনার সঠিক দিকনির্দেশের জন্য কুরআন ও সুন্নাহকে মূল উৎস সাব্যস্ত করা হয়েছে। ইসলামী জীবনব্যবস্থার আদর্শ ও মাপকাঠিরূপে অভিহিত করা হয়েছে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সহচরবৃন্দের অনুসৃত পথ, যা প্রধানতই ব্যবহারিক ও সান্নিধ্যগত আদর্শ। বই-পুস্তক ও তত্ত্ব প্রধান নয়। যে জন্য সাহাবায়ে কেরামের মূল সময়কালের শেষ পর্যায়ে আমরা পবিত্র মদীনা মুনাওয়ারায় হযরত মালেক ইবনে আনাসকে রাহ. দেখতে পাই গোটা মুসলিমসমাজের লোকশিক্ষক ও দিকনির্দেশক হিসেবে। ইসলামের উপর আমল করার জন্য মদীনাবাসী তখন থেকেই কুরআন ও সুন্নাহ নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে গবেষণা বা অনুসন্ধান শুরু না করে ফকীহ ও আলেম ইমাম মালেকের ফিকাহ বা মাযহাবের উপর, তার নির্বাচন ও পর্যবেক্ষণের উপর নিশ্চিন্তে নির্ভর করেছেন। এরও বহু আগে থেকে মক্কাবাসীরা নির্ভর করেছেন হযরত ইবনে আববাস রা.-এর উপর। এর কিছুদিন পর থেকে বৃহত্তর ইরাকবাসী ইমামে আজমের ফিকহের উপর। আর এটিই কুরআন ও সুন্নাহর বিধান। আল্লাহ তাআলা যেমন বলেছেন, তোমরা অনুসরণ কর আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের। আর অনুসরণ কর তোমাদের উলুল আমর বা শরীয়তী অথরিটির। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, পিতার সন্তুষ্টিতেই রয়েছে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি। তো আমার পুত্রকে দৈনন্দিন জীবনের যে শরীয়ত সম্পর্কিত শিক্ষা-দীক্ষা আমি দেব তা তৎক্ষণাৎ গ্রহণ করা ও তার উপর আমল করাও পুত্রের উপর শরীয়তেরই নির্দেশ। এখানে আমাদের মধ্যকার এ আদান-প্রদান কিছুতেই কুরআন-সুন্নাহ বিবর্জিত বা বিরোধী নয়।

মুসলিমজাতির হাতে তাদের শরীয়তের ব্যবহারিক রূপরেখা সমন্বিত ও সংকলিত আকারে তুলে দেওয়ার জন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশে যেসব সাহাবী, তাবেয়ী ও পরবর্তী যুগের ফকীহগণ কঠোর জ্ঞান-গবেষণা ও সাধনা করেছেন তাদের মর্যাদা বা গুরুত্ব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা এখানে সম্ভব নয়, একখানা উদ্ধৃতি উল্লেখ করাই বিষয়টির মাহাত্ম্য উপলব্ধি করার জন্য যথেষ্ট মনে হয়। হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একজন বিখ্যাত সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, রাতের কিছু সময় ইলম চর্চা করা রাতভর নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম।

কুরআন-সুন্নাহর ভেতর মানবজীবনের উদ্ভূত যে কোনো সমস্যার সমাধান পেয়ে গেলে এ থেকেই আমাদের তা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সমাধানে পৌঁছার জন্য নিজের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও বিবেচনার আশ্রয় নিতে হবে। এটি হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই আদর্শ। হযরত মুআয ইবনে জাবাল রা.কে ইয়েমেনে পাঠানোর সময় তার মুখ থেকে এ কথা শুনতে পেয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুশি হয়ে আল্লাহর শোকর গোযারি করেছিলেন।

ইসলাম পৃথিবীর সর্বকালের সকল মানুষের জন্য চিরস্থায়ী জীবনব্যবস্থারূপে কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস প্রভৃতির মূলনীতির ভিত্তিতে ফকীহ ও মুজতাহিদ সাহাবীগণের মাধ্যমে ব্যবহারিক বিধানরূপে, সমস্যার সমাধানরূপে, বিচারালয়ে ফয়সালারূপে জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে অতুলনীয় ব্যবস্থারূপে তার ব্যাপক আকার পরিগ্রহ করতে থাকে। ব্যবহারিক জীবনে ইসলামের নানা বিধানে কিছু বৈচিত্র ইসলামের বিশালত্ব ব্যাপ্তি ও কালজয়ী গুণেরই বহিঃপ্রকাশ। অসংখ্য বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের পর্যবেক্ষণে ছিল অনেক মতবৈচিত্র! এ ইসলামের এক স্বীকৃত রীতি। প্রায়োগিক বিধানের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ তথা বিস্তারিত ফিকহ রচনার সময়ও মুজতাহিদ আলেমগণের পর্যবেক্ষণ, উপলব্ধি ও নির্বাচনে এ ধরনের বৈচিত্র ফুটে ওঠে। শরীয়তে চিন্তার এ বৈচিত্রকে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে মূল কথা হচ্ছে কুরআন মজীদ, সুন্নাহ, প্রথম যুগের প্রচলন, সাহাবীদের ঐকমত্য আর পূর্ববর্তী নজির অনুসরণ। এসব মূলনীতি বিশ্লেষণ করেই আপেক্ষিক বিষয়ের মধ্যে একটিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। আর এ ইজতিহাদী তত্ত্বের ভিত্তিতেই গড়ে ওঠেছে ইসলামের বহুমাযহাব সম্বলিত ব্যবহারিক ফিকহ।

কুরআন-সুন্নাহ ও এর প্রাসঙ্গিক সকল বিষয় যে সুযোগ্য ব্যক্তির নখদর্পণে, মুসলিম জাতির প্রয়োজনে তিনিই পারেন ইজতিহাদ করতে। কেননা, সাহাবায়ে কেরামের মতবৈচিত্রপূর্ণ কোনো বিষয় কিংবা সাহাবীদের যুগের পরবর্তী কোনো নতুন সমস্যার সমাধান নির্বাচন ও পর্যবেক্ষণ ছাড়া কার্যকর করা সম্ভব ছিল না। ফলে অসংখ্য মত ও মাযহাবের বৈচিত্র ছিল খুবই স্বাভাবিক, যার মধ্যে অপেক্ষাকৃত প্রসিদ্ধ চারটি মাযহাবের সাথে মুসলিম জনসাধারণ সমধিক পরিচিত। এসব মাযহাবের কোনোটিই কুরআন-সুন্নাহ বহির্ভূত নয় এবং কোনোটিই এমন নয়, যার অনুসরণ করলে আমরা কুরআন-সুন্নাহর অনুসারী বলে গণ্য হব না। এমনকি একটি মাযহাবের ইমাম অপর মাযহাবের ইমামের এলাকায় বেড়াতে গিয়ে তার ফিকহ অনুসারেই আমল করেছেন এমন উদাহরণও ইমামদের জীবনে দেখা যায়। যেন আমরা বুঝতে সক্ষম হই যে, মাযহাব কেবলই নির্বাচন ও পর্যবেক্ষণের বিষয়।

কুরআন-সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াসের সমন্বয়ে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তের বহুমাত্রিকতা থেকে একটি অবস্থাকে প্রাধান্য দেওয়ার নাম তারজীহ। আর এ প্রাধান্যপ্রাপ্ত সমাধানগুলোই হচ্ছে মাযহাবের বৈচিত্রপূর্ণ অংশ। অতএব মাযহাব মানা আর কুরআন-সুন্নাহ মানার মধ্যে কোনোই ফারাক থাকার কথা নয়। তাছাড়া সাধারণ মুসলমানের পক্ষে কোনো আংশিক বা সামগ্রিক, প্রসিদ্ধ কিংবা অখ্যাত মাযহাব অনুসরণ ছাড়া শরীয়তের উপর আমল করাও প্রায় অসম্ভব।
কেননা, ইসলামের বিশালত্ব, চিরস্থায়িত্ব ও সর্বকালের সকল অঞ্চলের মানুষের উপযোগী ধর্ম ও জীবনব্যবস্থা হিসেবে এর ভেতরকার সবকিছুই পরম উদার ও বৈজ্ঞানিক। এতে অনেক সুযোগ, উদারতা ও বিস্তৃতি রয়েছে। জীবন ও জগতকে গতিশীল উপায়ে এগিয়ে নেওয়া ইসলামের প্রেরণা। সুতরাং এখানে প্রায় সব বিষয়েই অনেক এখতিয়ার, অনেক সহজতা। ইসলামের মূল ইবাদত নামাযের ভেতর যত বৈচিত্র ও সহজতা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন থেকে হাদীসের মারফত আমরা পাই, এর সবগুলোর উপরই আমাদের আমল করার বৈধতা ও যুক্তি রয়েছে। এতে একজন বিজ্ঞ মুজতাহিদ যখন একটি নামায পদ্ধতি আমাদের জন্য কুরআন-সুন্নাহ, ইজমা, কিয়াস-এর আলোকে নির্বাচন করবেন, তখন সেটাই এক এলাকার, এক সংস্কৃতির মানুষকে ধারণ করতে হবে। এ পদ্ধতির চর্চাই পরস্পরগতভাবে প্রজন্মান্তরে চলতে থাকবে। শুধু নামায নয়, যাকাত, হজ্ব, কুরবানী, পাক-নাপাক, হালাল-হারাম, জায়েয-নাজায়েযের প্রতি ক্ষেত্রেই এভাবে মাযহাবের প্রয়োজনীয়তা মুসলিমজাতি উপলব্ধি করবে। সর্বোপরি সকল মাযহাবের ইমামদের অভিন্ন একটি কৈফিয়ত ইসলামে রয়েছে যে, আমার নির্বাচিত মাসআলার বিপরীতে যদি আরও শক্তিশালী প্রমাণ খুঁজে পাও তাহলে আমার মাসআলা ত্যাগ কর। বিশুদ্ধ হাদীস যদি আমার সিলেকশনকে চ্যালেঞ্জ করে তাহলে আমার কথাকে ছুঁড়ে ফেলে দাও। এখানে অবশ্য একজন মুজতাহিদের নির্বাচনকে যাচাই করার জন্যও ন্যূনতম কিছু যোগ্যতার প্রয়োজন। সাধারণ একজন দর্শক, শ্রোতা বা পাঠকের পক্ষে এক্ষেত্রে নাক গলানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও অসঙ্গত।

যদি কোনো ব্যক্তি নিজেই শরীয়তের সকল শর্ত পূরণ করা একজন মুজতাহিদ হন তাহলে তিনি কোনো ইমামের মাযহাব অনুসরণ না করে নিজেই কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবনযাপন করতে পারেন। তবে কুরআন-হাদীসের অনেক শাস্ত্রবিদ মনীষীও এ ধরনের ঝুঁকি নিতে চাননি। কেননা, বিষয়টি শরীয়তের এক বা দুই শাস্ত্রের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়, কুরআন ও হাদীস সংক্রান্ত সকল মৌলিক শাস্ত্রে গভীর বুৎপত্তির অধিকারী হয়ে নিজেকে নতুন পথের পন্থী দাবি করা চাট্টিখানি কথা নয়।

অতএব নির্দ্ধিধায় আমরা স্বীকৃত মাযহাবগুলোর উপর আমল করতে পারি। কর্মসূচিগত ও সামাজিক শৃঙ্খলার জন্য যেকোনো একটি মাযহাবকে বেছে নেওয়া জরুরি। যেমন, একটি বহুতল ভবনে ওঠার জন্য যদি সিঁড়ি, এসকেলেটর, লিফট, ক্রেন, রশি প্রভৃতি উপায় থাকে তাহলে একই সঙ্গে একাধিক উপায় অবলম্বন করা শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ বলে বিবেচিত। একটি পন্থাই বেছে নিতে হবে আমাকে। তাছাড়া ধর্মীয় কার্যক্রমের ক্ষেত্রে একটি পন্থা অনুসারে আমল করা এজন্যও কর্তব্য যে, ইবাদত বা আচরণে অস্থিরতা এর আবেদনকে বহুলাংশে ক্ষুণ্ণ করে থাকে।

অতএব স্বাভাবিকভাবেই আমরা এ সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, মাযহাব অনুসরণ করলে প্রকৃতপক্ষে আমি কুরআন-সুন্নাহই অনুসরণ করলাম। আমি তখন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত। আমি তখন আহলে কুরআন, আহলে হাদীস। আমিই তখন সালাফী বা পূর্ববর্তী মুরববীদের অনুসারী। কেননা, এসব পথের মূল প্রেরণা আর মাযহাব সংকলনের প্রেরণায় কোনোই বিরোধ নেই।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বোধ ও উপলব্ধি দান করুন, আমীন।

মাযহাব

Read more ...

Tuesday, July 19, 2011

বিষয় : কাপড় পরিধান


টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়ার ব্যাপারে ইসলাম কি বলে 


আবু যর রা. বলেন, রাসূল-সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম- বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তিন ব্যক্তির সাথে কথা তো বলবেনই না বরং তাদের দিকে তাকিয়েও দেখবেন না। এমনকি তিনি তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না বরং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি । আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তারা কারা? তবে এরা তো ধ্বংশ, তাদের বাঁচার কোন রাস্তা নাই। রাসূল-সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম- এ কথা তিনবার বলেছেন। তারা হলঃ
১) যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরে।
২) যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম খেয়ে ব্যাবসার পণ্য বিক্রি করে।
৩) যে ব্যক্তি কারো উপকার করে আবার খোটা দেয়। (মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ ও ইবন মাজাহ্)।

আবু হুরায়রা নবী -সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম- থেকে বর্ণনা করে বলেন,লুঙ্গির যে অংশ টাখনুর নিচে থাকবে তা আগুনে প্রজ্জলিত হবে। (বুখারী)

জাবের ইবন সুলাইম রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন, টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পড়ার ব্যাপারে সাবধান হও। কারণ, তা অহংকারের অন্তর্ভূক্ত। আর আল্লাহ অহংকার করাকে পছন্দ করেন না। (আবু দাঊদ)।

ইবন বায এবং ইবন উছাইমীন (রাহ.) এর ফাতওয়াযে কোন অবস্থায় টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়াকে রাসূল সা. অহংকারের অর্ন্তভূক্ত বলেছেন। কারণ, তিনি বলেন, টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পড়া থেকে সাবধান! কারণ তা অহংকারের অন্তর্ভূক্ত। এখানে তিনি বিশেষ কোন অবস্থাকে বাদ দেন নি। সুতরাং যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরবে সে এ শাস্তির আওতায় চলে আসবে। চাই তা পায়জামা হোক বা লুঙ্গি, কুর্তা বা অন্য কোন পোশাক। কোন পোশাকের ক্ষেত্রেই টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পড়ার সুযোগ নেই।

মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল উছাইমীন (রাহ.) বলেন, অহংকার বশতঃ যে ব্যক্তি লুঙ্গি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পড়বে তার শাস্তি হল, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার সাথে কথা তো বলবেনই না বরং তার দিকে তাকিয়েও দেখবেন না। এমনকি তিনি তাকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না বরং তার জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি আর যদি অহংকার বশতঃ ঝুলিয়ে পরে তাবে তার শাস্তি হল, সে যতটুকু কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরেছিল ততটুকু আগুনে প্রজ্জলিত হবে।

(তথ্যসূত্রঃ ফাতওয়া আল বালাদুল হারাম, ১৫৪৭, ১৫৪৯, ১৫৫০ নং পৃষ্ঠা)

Read more ...

Tuesday, June 14, 2011

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস (১৪ই ফেব্রুয়ারী) : হারাম শরীফের (মক্কা শরীফের) সম্মানিত ইমাম কী বলেন (রিপোর্ট)

সূধী মণ্ডলী,
মুসলিম ব্যক্তি শক্তি, শৌর্যবীর্য, সম্মান ও মর্যাদার ঠিক ততটুকু অংশ পায়; যতটুকু সে ইসলামকে নিয়ে গর্ববোধ করে, ইসলামী আকীদা-বিশ্বাসের উপর অটল থাকে, ইসলামী আদব-আখলাক ও শিষ্টাচারে নিজেকে সুসজ্জিত করে এবং বিপরীতমুখী নীতি-নৈতিকতার অন্ধ অনুকরন ও অজানা সব আদর্শের তাঁবেদারী থেকে বেঁচে থাকেযে শৌর্যবীর্য ও সম্মান ও মর্যাদার আকাঙ্ক্ষা প্রতিটি মুসলিমের, বরং প্রতিটি মুসলিম জনপদের তা অর্জনের মূল সূত্র হচ্ছে- রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) অনুসরন করা, তাঁর আদর্শের অনুকরন করা এবং অভিনব আদর্শ, অভূতপূর্ব সব পথ ও মত থেকে দূরে থাকারাসূলের অনুসরন হতে হবে এমন যাতে কোন কপটতা থাকবে না, বরং থাকবে নিরেট ভালোবাসা ও অগাধ আন্তরিকতাঅনুকরন হতে হবে এমন যা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর মাঝে এ উপলব্ধি জাগ্রত করবে যে, আচার-আচরণ, শিষ্টাচার ও ধর্মীয় সকল বিষয়ে এককভাবে আল্লাহর আনুগত্য করতে হবে, অন্য কারো আনুগত্য করা চলবে নাযেহেতু আনুগত্য ও অনুসরন ছাড়া কোন ধর্মই হতে পারে নাআর এ কারণেই মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে তাঁর মুমিন বান্দাদেরকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে- এটাই আমার পথ, সরল ও সোজাতোমরা এ পথ ধরে চল, অন্য পথগুলোর দিকে ধাবিত হয়ো না, তাহলে তোমাদেরকে ভিন্নদিকে নিয়ে যাবেআল্লাহর পথ ব্যতীত অন্য সব পথের মুখে একটা করে শয়তান আছে, সে মানুষকে ঐ পথের দিকে ডাকেযে তার ডাকে সাড়া দেয় তার মাঝে বিদআতের (নতুন আদর্শের, নতুন চালচলনের) প্রেম জাগাইয়া তোলে, এবং সুন্নত (রাসুলের আদর্শ) থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দেয়এটা হলো শয়তান ও বনী আদমের মাঝে বন্ধুত্বের প্রথম ধাপশয়তানের ষড়যন্ত্র ও বিভ্রান্তিগুলো চলাচলের পথে ঘাপটি মেরে বসে থাকা দুস্কৃতিকারী চক্রের ন্যায়, যারা দোদুল্যমান, দ্বিধাগ্রস্থ পথচারীদেরকে টার্গেট করে বসে থাকে, আর একজনকে শায়েস্তা করতে পারলে সবকিছু লুটে কোন ময়লা-আবর্জনার ডোবায় নিয়ে নিক্ষেপ করেএভাবে শয়তানও তার অনুসারীদেরকে রাসূলের সুন্নাহ থেকে দূরে নিয়ে যায়শয়তানের অনুসারীরা হয়তোবা প্রথম ডাকে সম্পূর্ণ বিপথে চলে যায় এবং শয়তানের রঙ্গে রঞ্জিত হয় অথবা তাদের অবস্থা হয় ঐ ব্যক্তির মত শয়তানেরা পথ ভুলিয়ে যাকে দিশেহারা করে ফেলেছে, তার সঙ্গীরা (যারা সঠিক পথে আছে) বলে, 'তুমি আমাদের পথে আস' (কিন্তু সে তো দিশেহারা), (হে রাসূল,) আপনি বলুন আল্লাহর পথই সঠিক পথআমাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছে আমরা যেন বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের প্রতি আত্মসমর্পন করি” [সূরা আনআম-৭১]
মুসলিম ভায়েরা,
আল্লাহকে ভালোবাসার অন্যতম নিদর্শন হল একনিষ্ঠভাবে তাঁর রাসূলের অনুসরন করা আল্লাহর বান্দাদের উচিত তাঁকে ভালোবাসার নিদর্শন সরূপ তাঁর রাসূলের অনুসরনের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করা, যাতে তাদের ভালোবাসার দাবীর সত্যতা প্রমাণিত হয়ঠিক যেভাবে আল্লাহ পাক নির্দেশ দিয়েছেন, বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমার অনুসরণ করতবে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেনতোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দিবেন। (হে রাসূল) আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করযদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলে দিন আল্লাহ কাফিরদের ভালোবাসেন না” [সূরা আলে ইমরান ৩১,৩২]
আল্লাহর বান্দারা,
সমাজে চালু থাকা বিদআত বা নতুন বিষয়াদি যেন প্রলয়নকারী তুফান, আর সহীহ সুন্নাহ ও তার অনুসরন হচ্ছে নুহের কিস্তি তুল্য যে এ কিস্তিতে আরোহন করেছিল সে রক্ষা পেয়েছে, আর যে অন্য পথ ধরেছে সে ডুবে মরেছে আর আল্লাহর রহমত ছাড়া তাঁর পাকড়াও থেকে রক্ষাকারী কেউ নেই”[আলকুরআন] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে ব্যক্তি আমাদের ধর্ম-দর্শনে নব কিছু সংযোজন করবে যা তার মধ্যে ছিল না তা প্রত্যাখ্যাত, অগ্রহনযোগ্য” (বুখারী ও মুসলিম) মুসলিম শরীফের অন্য বর্ণনায় এসেছে, যে সকল কর্মের ব্যাপারে আমাদের অনুমোদন নেই তা প্রত্যখ্যাতআল্লাহর বান্দারা, এ হাদীসটি ঈমানের একটি সুমহান মূলনীতি, এবং বাহ্যিক-আমলগুলো মূল্যায়নের সঠিক মাপকাঠিসুতরাং যে সকল কর্মে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুমোদন নেই তা ইসলামে অনুমোদিত নয়ইমাম নববী বলেন, এ হাদীসটি মুখস্ত থাকা উচিত, অসৎ কর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে এ হাদীসটিকে প্রয়োগ করা উচিত, এবং এ হাদীস দিয়ে দলীল পেশ করা বাড়ানো উচিতবর্তমান মুসলমানদের নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের প্রতি নজরদানকারী যে কেউ নিশ্চিতভাবে একটা রায় দেবেন যে, মুসলমানদের উচিত আত্মপর্যালোচনার মাধ্যমে নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়া এবং তাদের উচিত অনুসরণীয় জাতি হওয়া, তাঁবেদার নয়; এমন জাতি হওয়া যাদের সভ্যতা-সংস্কৃতি, চাল-চলন একান্ত নিজস্ব, আইনের উৎসও স্বতন্ত্র, যার কোন তুলনা নেইএমন জাতি হওয়া যে তার প্রভাব খাটিয়ে, আধিপত্য বিস্তারের যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে অন্য সব শিল্প-সংস্কৃতি ও সমাজ-সভ্যতাকে হার মানাবেবিশেষতঃ আকীদা-বিশ্বাস ও চাল-চলন, শিষ্টাচারের ক্ষেত্রেবিভিন্ন সভ্যতা ও জাতিগুলোর মাঝে যে অভ্যাস আবহমান কাল থেকে চলে আসছে তা হল অন্য জাতির সংস্কৃতি, আদব-আখলাক, রীতি-নীতি দ্বারা প্রভাবিত না হওয়াবরঞ্চ অন্য কোন সংস্কৃতি যদি তার সংস্কৃতির উপর প্রভাব বিস্তার করতে চায় তখন সে ঐ সংস্কৃতি থেকে আরো অনেক দূরে সরে যায়আর ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকা মানে নিজস্ব সংস্কৃতির আরো কাছে আসাযার ফলে কোন জাতি অন্য জাতির আচার-অনুষ্ঠান, কৃষ্টি-কালচার, দিবস পালন, উৎসব ইত্যাদির প্রতি আদৌ ভ্রূক্ষেপ করে নাকিন্তু অনাচারী মিডিয়া সুকৌশলে মুসলিম মিল্লাহর অন্দরে ঢুকে তাদের অনেকের ধ্যান-ধারণা, আকীদা-বিশ্বাস চুরি করতে সক্ষম হয়েছে, তাদের বিবেক বুদ্ধিকে গুলিয়ে দিতে পেরেছে, তাদের দৃষ্টি-ভঙ্গি প্লাটে দিতে সক্ষম হয়েছেএমন শক্তি প্রয়োগ করেও যে পরিবর্তন সম্ভব নয় মিডিয়ার মাধ্যমে তা করা সম্ভব হচ্ছে বড় দুঃখের বিষয় হচ্ছে- এ মিডিয়ার দুরন্ত উত্থান এবং মুক্ত সভ্যতা ও মুক্ত সংস্কৃতির অবাধ সয়লাবের ফলে এমন এক মিশ্র সংস্কৃতির তৈরী হয়েছে যার নিয়ন্ত্রণ কাঠি এখন আর মুসলমানদের হাতে নাই, যে সংস্কৃতিতে ইসলামী নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ-বিশ্বাসের কোন তোয়াক্কা করা হয় না, যে সভ্যতাতে মুসলমানদের রীতিনীতির পক্ষে কি বিপক্ষে তা খেয়াল করা হয় নাএভাবে তারা মুসলমান ও অমুসলমান সবাইকে অভিন্ন সংস্কৃতির গোলামে পরিণত করেছে, অথচ মুসলমানদের রয়েছে নিজস্ব জীবন-দর্শন, স্বতন্ত্র আকীদা-বিশ্বাস, বিশেষ অনুকরণ ও অনুসরণ যা অন্যদের নেই ফলে এ যেন দূধে ঘোল মিশাবার মত অবস্থা এবং মুসলিম উম্মাহর উপর আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব বিপদ সীমায় পৌঁছে গেছেআর মুসলমানদের একটা অংশ তো প্রতিটি নতুন ও বিরল সংস্কৃতির প্রতি একেবারে মোহাবিষ্টভাল-মন্দের কোন প্রকার বাছ বিচার না করে, লাভ-ক্ষতির প্রতি বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ না করে, নিজস্ব আকীদা-বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক কিনা তা না দেখে এরা প্রতিটি অভিনব সংস্কৃতির সুধা পান করে চলছে
হায় আল্লাহ, নিজ জাতির প্রতি নিষ্ঠাবান একজন পরহেজগার ঈমানদারের জন্য এর চেয়ে বেদনাদায়ক আর কি হতে পারে যিনি দেখতে পাচ্ছেন মিডিয়ার হাতে জিম্মি হয়ে তার জাতির লোকেরা বিজাতীয় আগ্রাসনের সামনে দলিত মথিত হয়ে অস্তিত্ব হারাতে যাচ্ছেন, যিনি দেখতে পাচ্ছেন অতি সন্তর্পনে পর্দার আড়ালে থেকে মুসলমানদের স্বতন্ত্র আকীদা-বিশ্বাস ও চাল-চরিত্রে বিষাক্ত জীবানু ছাড়নো হচ্ছেযার ফলে কোন কোন মুসলিম সমাজে যেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষতবাণীর বাস্তব নমুনা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে- তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের কাটায় কাটায় অনুকরন করবে, এমনকি তারা যদি কোন গুঁইসাপের গর্তেও ঢুকে থাকে তোমরাও তাতে প্রবেশ করবেসাহাবারা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, পূর্ববর্তীরা বলতে কি ইহুদী ও খ্রিস্টানদের বুঝাচ্ছেন? তিনি বললেন তারা না হলে আর কারা!” [বোখারী ও মুসলিম] এ যেন ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহুর বাণীর বাস্তব নমুনা, তিনি বলেছিলেন – “আচার-আচরণ ও নীতি- আদর্শে বনী ঈসরাইলের সাথে তোমাদের সাদৃশ্যটা খুবই ঘনিষ্টতোমরা পলে পলে তাদের কর্মের অনুকরন করবে, কিন্তু আমি জানি না তাদের মত গো বাচুরের উপাসনাও তোমরা করবে কি না?” কিন্তু জেনে রাখুন, এসব প্রোপাগাণ্ডা সত্তেও মানুষের মাঝে আল্লাহ প্রদত্ত নিস্কলুষ যে স্বভাব রয়েছে, একত্ববাদের যে ভিত রয়েছে তাকে কাজে লাগিয়ে বিবেকবানদের জাগিয়ে তোলা সম্ভব এবং বিজাতীয় দিবস পালন ও বিধর্মীদের আকীদা-বিশ্বাস থেকে মুসলমানদের ফিরিয়ে আনা সম্ভবকারণ সত্যের বিজয় অবশ্যম্ভাবী, সত্যকে কোনদিন একেবারে মিটিয়ে দেয়া সম্ভব নয়, ক্ষনিকের জন্য ঢাকা পড়ে গেলেও সত্যের রশ্মি পুনরায় জ্বলে উঠেবাতিলের এতসব লম্পজম্পের বিপরীতে আমরা নিষ্ঠাবান মুসলিমদের অন্তরে সে রশ্মির আলোকচ্ছটা স্পষ্ট দেখতি পাচ্ছি, তাদের অবস্থান যেখানেই হোক না কেন আপনি তাদেরকে দেখতে পাবেন নসিহতকারী হিসেবে, স্পষ্টবাদী সতর্ককারী হিসেবেএ থেকে এ সত্যই বেরিয়ে আসে যে, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রথম ধাপে যতই প্রভাব বিস্তারকারী হিসেবে প্রবেশ করুক না কেন স্বীয় ধর্মের উপর অটল, নিজ পরিচয়ে অনঢ় ব্যক্তির সামনে তা মূহুর্ত কালও টিকে নাহতে পারে ব্যক্তির মুসলিম পরিচয় কখনো কখনো দূর্বল হয়ে পড়ে, কিন্তু তা কখনো একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায় নাএরপর আমি তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ বিধানের উপর; সুতরাং তুমি তার অনুসরণ করো, অজ্ঞদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো নাআল্লাহর মুকাবিলায় তারা তোমার কোন উপকার করতে পারবে না; যালিমরা একে অপরের বন্ধু; আর আল্লাহ তো মুত্তাকীদের বন্ধুএই কুরআন মানব জাতির জন্যে সুস্পষ্ট দলীল এবং নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্যে পথ-নির্দেশ ও রহমত” [সূরা জাছিয়া-১৮-২০] আল্লাহ আমার ও আপনাদের জন্য কুরআন ও সুন্নাহর বরকত নসীব করুনএতক্ষণ যা বলেছি তা আমার বক্তব্য; যদি সঠিক হয় তবে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যদি ভুল বলে থাকি তবে তা আমার নিজের এবং শয়তানের পক্ষ থেকেআমি আল্লাহ পাকের কাছে আমার গুনা-খতার জন্য ও আপনাদের গুনা-খতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি, আপনারাও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন
দ্বিতীয় খোতবা
সমস্ত প্রশংসা এক আল্লাহর জন্য, আর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক ঐ নবীর উপর যার পর আর কোন নবী নাই
মুসলিম ভায়েরা,
আল্লাহকে ভয় করুনআর জেনে রাখুন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এবং আতঙ্কিত হওয়ার মত একটা বিষয় হলো- কিছু কিছু মুসলমান অমুসলিমদের উৎসবে অংশ গ্রহন ও তাদের দিবস পালনের মাধ্যমে তাদের আকীদা-বিশ্বাস, শিল্প-সংস্কৃতি, কৃষ্টি-কালচারের প্রতি চরমভাবে ঝুকে পড়ছেযেগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হওয়া ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম, এবং ইসলাম এ ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেকিন্তু এর চেয়েও দুঃখের বিষয় হল, আমরা লক্ষ্য করছি কিছু কিছু নির্বোধ লোক এগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অন্যদেরকে ও বিপদগামী করতে উদ্যত হচ্ছেতারা মনে করছে এর মাধ্যমে অন্য জাতির লোকদের সাথে ইতিবাচক সখ্যতা গড়ে উঠবে এবং কৃষ্টি-কালচার ও আচার-আচরণের একটা সেতু বন্ধন তৈরী হবেএ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আরো অনেকে এ পথে ধাবিত হয়েছে, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছি যে, যে কোন ব্যক্তি তাদের কর্মকাণ্ডের মাঝে শরীয়ত গর্হিত বিষয় স্পষ্ট দেখতে পানযে কোন বিবেকবান ব্যক্তি তাদের যে কর্মটির কড়া প্রতিবাদ করবেন তা হল অমুসলমানদের ঈদ উৎসব দ্বারা নিজেরা প্রভাবিত হওয়া ও অন্যদেরকেও এর প্রতি উৎসাহিত করাতারা এই যুক্তিতে বিষয়টিকে শিথিলভাবে দেখতে চান যে উন্মুক্ত বিশ্বে আজ মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই, এবং ধর্মীয় বা বিশ্বাসনির্ভর বিভিন্ন দিবস ও উৎসব পালনে জাতিতে জাতিতে ভেদাভেদ থাকা উচিত নয়এই মতাদর্শ অত্যন্ত বিপজ্জনক -আল্লাহ পাক আপনাদেরকে হেফাজত করুন-, যদি আপনারা দেখতে চান তবে দেখুন ভালবাসা দিবসবা মাতৃ দিবসবা এ ধরনের অন্যান্য দিবসগুলো মুসলমানদের আকীদা-বিশ্বাস ও চরিত্রের উপর কি ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছেঅথচ এসব দিবসের গোড়ার কথা তারা জানে না, এ দিবসগুলোর ঐতিহাসিক পটভূমি সম্পর্কে তারা অজ্ঞ এবং এ দিবসগুলো মুসলমানের আকীদা-বিশ্বাস ও আখলাকের জন্য কতটুকু হুকমি তাও তারা ভেবে দেখতে নারাজ, এ বিচারও তারা করে না এগুলো পালনের মাধ্যমে বিজাতীদের সাথে সাদৃশ্য অর্জিত হবে যা থেকে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাদেরকে নিষেধ করেছেন, এবং বিজাতীদের বিরুদ্ধাচারণ তরক করা হবে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যা করার আদেশ দিয়েছেনভালোবাসা দিবস সম্পর্কে ওয়াকিফহাল ব্যক্তি জানেন যে, মুসলিম যুবক-যুবতীরা এ ধরনের দিনগুলোতে সব ধরনের চেতনা হারিয়ে এসব বিজাতীয় দিবস পালনের তুমুল প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে, অথচ তারা এ দিবসগুলোর ঐতিহাসিক পটভূমি জানার কোন প্রয়োজন অনুভব করে নাবরঞ্চ এর চেয়ে আফসোস হচ্ছে- তাদের মধ্যে যারা এর কিছু পটভূমি জানে তারা এ হিসেবে জানে যে, এ দিনটির ঐতিহাসিক পটভূমি হল- কোন কোন বর্ণনা মতে- খ্রীস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে রোম দেশের একব্যক্তি সেনা সদস্যদের জন্য গোপনে বিয়ের ব্যবস্থা করতেন, কারণ তাদের রাজা সৈন্যদের জন্য বিয়ে করা নিষিদ্ধ করেছিল; যেন যুদ্ধ ছেড়ে দিয়ে বিয়ে-সাদীতে ব্যস্ত হয়ে না পড়েঅবশেষে এ ব্যক্তির খবর ফাঁস হয়ে যায় এবং তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়এ লোকের ফাঁসির দিনটিকে স্মৃতিতে ধরে রাখার জন্য তারা এ দিনে উৎসব পালন করে, লাল গোলাপ উপহার দেয়, প্রেম পত্র আদান প্রদান করেবরঞ্চ অমুসলিম দেশগুলোর কোন কোনটিতে আরো বেশী বাড়াবাড়ি করা হয় এবং এ দিনটিকে ব্যভিচারের দিন হিসেবে পালন করা হয় বর্তমানে এ দিনটি প্রেমিক-প্রেমিকাদের উৎসবের দিন হিসেবে পালিত হচ্ছেএ দিনে তারা লাল পোশাক পরিধান করে, লাল গোলাপ বিতরনের মাধ্যমে 'লাল প্রতীককে' ফুটিয়ে তোলেযেন তারা এ কথা বলতে চাচ্ছে যে, সব ধরনের রেড সিগনাল অতিক্রম করে নারী-পুরুষের অবাধ সম্পর্ক গড়ে তোল; হোক না এ রেড সিগনাল ধর্মীয়, অথবা চারিত্রিক অথবা অন্য কোন পক্ষ থেকেআর লাল গোলাপ হল নারী-পুরুষের মাঝে সম্পর্ক গড়ার যে স্বীকৃত রীতি-নীতি রয়েছে তাকে উপেক্ষা করার প্রতীকআমাদের ধর্ম হচ্ছে আসমানী ধর্ম, যার মিশন হচ্ছ বিশ্বময়ী, যে মিশনের ইতিবাচক প্রভাব সমাজ ও সভ্যতার উপর সুস্পষ্টতাই আমাদের ধর্মে পারস্পারিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতিকে শুধু একদিনে সংকোচিত করার কোন সুযোগ নেই অথবা মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শনের জন্য কোন একটা দিনকে বিশেষিত করার কোন প্রয়োজন নেইবরং আমাদের ধর্ম সকল কালের, সকল সময়ের জন্য ভালোবাসার ধর্ম, সম্প্রীতির ধর্ম; তবে সে ভালোবাসা কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনার আলোকে স্বীকৃত হতে হবেআল্লাহর রাসূল (সাঃ) থেকে বিশুদ্ধ বর্ণনা সূত্রে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন, “ঐ সত্তার কসম যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তোমরা ঈমানদার হওআর তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাস এ ছাড়া ইসলামের রয়েছে স্বতন্ত্র বিধি-বিধান, নিজস্ব রীতি-নীতি যেগুলোর সমজাতীয় বিধি-বিধান বা রীতি-নীতি অন্য কোন মতবাদের কাছ থেকে গ্রহন করা সম্পূর্ণ অবৈধ কারণ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করলেন তখন দেখতে পেলেন মদীনাবাসীরা বিশেষ দুটি দিনে খেলাধুলা করেতখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এই দুই দিনের বিশেষত্বটা কি? তারা বললেন, জাহিলী যুগে আমরা এই দুই দিন খেলাধুলা করতামতখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলা এ দুই দিনের পরিবর্তে তোমাদেরকে এর চেয়ে ভালো দুটি দিন দিয়েছেন, তা হল- ঈদুল ফিতর (রোযার ঈদ) ও ঈদুল আযহা (কুরাবানীর ঈদ) [আবু দাউদ, নাসায়ী ও আহমদ] বোখারী ও মুসলিমের এক বর্ণনায় এসেছে, প্রতিটা জাতির খুশির দিন আছে এটা হল আমাদের খুশির দিন বিশুদ্ধ বর্ণনা সূত্রে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহন করবে সে তাদের একজন বলে স্বীকৃত হবে”[আহমদ ও আবু দাউদ] এ আলোচনা থেকে আমরা এটা জানতে পারলাম এসব দিবস উদযাপনকারী মুসলিম সন্তানেরা নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হয়েছেন এবং তারা দুটো অপকর্মে জড়িত হয়েছেন- এক: তারা বিজাতীদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহন করেছেনদুই: তারা বিজাতীদের বিরুদ্ধাচার করা পরিত্যাগ করেছেনঅথচ আল্লাহ পাকের ঘোষণা হচ্ছে- আর এভাবে আমি তা (কুরআনকে) আরবী ভাষায় বিধানসরূপ অবতীর্ণ করেছিআপনার কাছে জ্ঞান পৌঁছার পরও যদি আপনি তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরন করেন তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য কোন সাহায্যকারী ও রক্ষাকারী পাবেন না” [সূরা রাদ ৩৭]মক্কা মুকাররমার মসজিদে হারামের ইমাম ও খতীব: শায়খ সৌদ বিন শুরাইমের প্রদত্ত খোতবার অনুবাদ।

Read more ...