গান ও বাদ্যযন্ত্র : ইসলামী দৃষ্টিকোণ
গান ও বাদ্যযন্ত্র ইসলামী শরিয়তে হারাম হওয়ার অকাট্য বিধান থাকা সত্বেও
আমাদের বর্তমান মুসলিম সমাজে আজ নিঃসন্দেহে অবহেলিত। বলাই বাহুল্য যে, নিকট অতীতেও আমাদের সবুজ বাংলার শহর-বন্দর-গ্রাম-পল্লী-পাড়া ও মহল্লার
প্রতিটি মসজিদ ও মক্তব থেকে প্রভাতের বাতাসে-বাতাসে ভেসে আসত শিশু-কিশোর-কিশোরীদের
সমস্বরে কায়দা-ছিফারা ও কোরআন তেলাওয়াতের মিষ্টিসুর। শিশু কন্ঠের এই মধুর তেলাওয়াতে সত্যিকার অর্থে সমাজের
সকলস্তরের মানুষই প্রভাবিত না হয়ে পারত না।
তাই
সকলেই অত্যন্ত আগ্রহভরে নিজ শিশু-কিশোরদের প্রাতকালেই ঘুম থেকে জাগিয়ে জামা, কাপড়, টুপি পড়িয়ে
কায়দা-ছিফারা হাতে তুলে দিয়ে মক্তবে পাঠাত। সত্যি বলতে কি? শিশু-কিশোর-কিশোরীদের পরনে পান্জাবী, মাথায় টুপি বা উড়না ও হাতে কায়দা-ছিফারা নিয়ে মসজিদ-মক্তবে আসা-যাওয়ার
সেই মনোরম দৃশ্য মুসলিম সমাজ জীবনে এক জান্নাতী দৃশ্যই ছিল। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, সেই মনকাড়া দৃশ্য এখন আর তেমন দৃষ্টিগোচর হয় না। এর মূল কারণ হল, যদি ও সমাজের মুসলমানেরা প্রাতকালীন মক্তব-মাদ্রাসার গুরুত্ব অনুধাবন করতে
পারেনি, তবে
ইহুদী-খৃষ্টান জগত মুসলিম সমাজের শিশু-কিশোরদের প্রাতকালীন এ শিক্ষাব্যবস্থাকে
অত্যন্ত গভীরভাবে লক্ষ্য করেছে।
ওরা
লক্ষ্য করেছে, মুসলিম সমাজের
যুবক ও বয়োবৃদ্ধরা যদিও স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় যেতে পারেনি, অক্ষরজ্ঞানহীন মূর্খই থেকে গেছে, তথাপি দ্বীন-ধর্ম-কর্ম সম্পাদনে তথা নামাজ-রোজা সহ
বিভিন্ন দোয়া-দুরুদ ইত্যাদি শতভাগ শুদ্ধ না হলে ও মোটামুটি ভাবে মৃত্যু পর্যন্ত
তাদের স্মৃতিতে ধারণ করে রাখে, ভূলে যায় না। ওরা দেখেছে,
গ্রাম
বাংলার প্রতিটি পাড়ায়-মহল্লায় শিশু-কিশোরদের জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রতিটি মক্তব
থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত কিশোর-কিশোরীরা মহান আল্লাহর একত্ববাদ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম এর রেসালত তথা
ইসলামী আক্বিদা-বিশ্বাস অত্যন্ত গভীরভাবে তাদের অন্তরে লালন করে, যা কখনো মুছে যাবার নয়। ওরা বুঝতে পেরেছে যে, শিশুকালের শিক্ষা পাথরে অঙ্কনের ন্যায়। শিশুরা শিশুকালে যতটুকু কোরআন শিখতে সক্ষম হয়, ইসলামী আক্বিদা-বিশ্বাস তথা ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে যতটুকু
জ্ঞান তাদের কচি মনে এঁকে দেয়া হয়,
ততটুকু
কিন্তু মৃত্যু পর্যন্ত তাদের মন মগজে পাথরে অঙ্কনের মতই থেকে যায়। কখনো স্মৃতি থেকে মুছে যায় না। কাজেই ইহুদী খৃষ্টান চক্র মুসলিম সমাজ থেকে এ প্রাতকালীন
শিক্ষা ব্যবস্থাকে উৎখাত করার লক্ষ্যে বেসরকারী সাহায্য সংস্থা বা এন, জি, ও গুলোর
মাধ্যমে মুসলিম সমাজের পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় গড়ে তুলেছে প্রাতকালীন কে, জি স্কুল বা কিন্টার গার্ডেন। আর ইহুদী-খৃষ্টানদের দালাল এন,জি,ও রা এই কে, জি স্কুলের বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে
যাচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে তারা সফলতাও অর্জন করেছে। অথচ এসমস্ত স্কুলে আমাদের শিশু-কিশোরদের সাধারণ শিক্ষার
পাশাপাশি অত্যন্ত সুকৌশলে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে গান, বাজনা, তবলা, সারিন্দা,
হারমুনিয়াম
ইত্যাদি।
এখানে ভেবে দেখার বিষয় হল, ওরা আমাদের
মুসলিম শিশু-কিশোরদের জন্য উন্নতমানের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করবে, ওদেরকে শিক্ষিত সচেতন নাগরিক হিসাবে বেঁচে থাকার প্রেরণা
দেবে, তা সত্যিই
প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এতে কারো
দ্বিমত থাকার কথা নয়। তবে প্রশ্ন হল, এই স্কুলগুলো প্রাতকালে কেন? অন্য কোন এক সময় কি হতে পারত না? কেন ওরা আমাদের কচি শিশুদের কোরআন শিক্ষা থেকে বিরত রেখে
গান- বাজনা শিক্ষা দেয়ার প্রতি মনযোগী হল? এর মূল রহস্য হলঃ ওরা ওদের মুরুব্বীদের পথ অনুসরণ করেছে। ওদের মুরুব্বী আবুজেহেল, আবু লাহাবেরা পবিত্র কোরআনের প্রচার-প্রসারে বিঘ্নতা সৃষ্টির লক্ষ্যে যে
আদর্শ (?) রেখে গেছে, তা-ই তারা অবলম্বন করছে মাত্র। মক্কার কাফের মুশরিকরা কোরআন শিক্ষা তথা কোরআন শ্রবণ
থেকে মানুষদের বিরত রাখার জন্য ঘোষণা দিয়েছিল।
وَقَالَ
الَّذِينَ كَفَرُوا لَا تَسْمَعُوا لِهَذَا الْقُرْآَنِ وَالْغَوْا فِيهِ
لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُونَ
আর কাফেরেরা বলে, তোমরা এ কোরআন
শ্রবণ করোনা, এবং এর
আবৃত্তিতে হট্টগোল সৃষ্টি কর, যাতে তোমরা
জয়ী হও। ( সূরা ফুচ্ছিলাত
: ২৬)
তাফছিরে কুরতুবীতে লিখেন :- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আবু জেহেল অন্যদেরকে প্ররোচিত করল যে, মুহাম্মদ যখন কোরআন তেলাওয়াত করে, তখন তোমরা তার সামনে গিয়ে হৈ-হুল্লোড় করতে থাকবে, যাতে সে কি বলছে তা কেউ বুঝতে না পারে। কেউ কেউ বলেন, কাফেরেরা শিশ দিয়ে, তালি বাজিয়ে
এবং নানারূপ শব্দ করে কোরআন শ্রবণ থেকে মানুষকে বিরত রাখার প্রস্তুতি নিয়েছিল ।
( সংক্ষেপিত মাআরিফুল কোরআন -১২০৪)
কোরানের দলীল:
আল্লাহ তাআলা সূরা লুকমানে আখেরাত-প্রত্যাশী মুমিনদের প্রশংসা করার পর
দুনিয়া-প্রত্যাশীদের ব্যাপারে বলছেন,
((وَمِنَ
النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ
بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ))
““মানুষের মধ্যে
এমন ব্যক্তিও আছে যে অর্থহীন ও বেহুদা গল্প কাহিনী খরিদ করে, যাতে করে সে (মানুষদের নিতান্ত) অজ্ঞতার ভিত্তিতে আল্লাহ
তাআলার পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে, সে একে হাসি, বিদ্রুপ, তামাশা হিসেবেই গ্রহণ করে; তাদের জন্য অপমানকর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে”
(সূরা লোকমান : ০৬)
উক্ত আয়াতের শানে নুযূলে বলা হয়েছে যে, নযর ইবনে হারিস বিদেশ থেকে একটি গায়িকা বাঁদী খরিদ করে এনে তাকে গান-বাজনায়
নিয়োজিত করল। কেউ কুরআন
শ্রবণের ইচ্ছা করলে তাকে গান শোনানোর জন্য সে গায়িকাকে আদেশ করত এবং বলত মুহাম্মদ
তোমাদেরকে কুরআন শুনিয়ে নামায, রোযা এবং
ধর্মের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার কথা বলে।
এতে
শুধু কষ্টই কষ্ট। তার চেয়ে বরং
গান শোন এবং জীবনকে উপভোগ কর।
-মাআরিফুল
কুরআন ৭/৪
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কে উক্ত আয়াতের ‘লাহওয়াল হাদীস’-এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘তা হল গান।’ আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. একই কথা বলেন। তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে যুবাইর থেকেও অনুরূপ মত বর্ণিত হয়েছে। বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী রাহ. বলেন, উক্ত আয়াত গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, যা বান্দাকে কুরআন থেকে গাফেল করে দেয়।
– (তাফসীরে ইবনে
কাসীর ৩/৪৪১. তাফসিরে তাবারী)
ইমামুল মুফাচ্ছিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) ও লাহওয়াল
হাদিসের অর্থ গান-বাজনাই করেছেন।
ইমাম
ওয়াহিদী প্রমুখ মুফাচ্ছিরীনগণ বলেনঃ অধিকাংশ মুফাচ্ছিরীনগণই উক্ত আয়াতের
লাহওয়াল হাদিস এর অর্থ গান-বাজনাই করেছেন।
ইমাম
বুখারী ও ইমাম বাইহাক্বী স্ব-স্ব কিতাবে লাহওয়াল হাদিসের এ তাফসীরই অবলম্বন
করেছেন।
তাঁরা বলেনঃ لهو الحديث هو
الغناء وأشباهه অর্থাৎ লাহওয়াল হাদিস বলে গান ও তদনুরূপ অন্যান্য বিষয় বোঝানো
হয়েছে। (যা আল্লাহর
এবাদত থেকে বান্দাকে গাফেল করে দেয় ) বিস্তারিত জানার জন্য তাফসিরে মাআরিফুল
কোরআনে সূরা লুক্বমানের ৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দেখা যেতে পারে।
লাহুআল হাদিস বলতে যারা গান-বাজনা বুঝিয়েছেন তাদের নাম নীচে দেয়া হলো:
১। আবদুল্লাহ ইবন
মাসঊদ (রা) [ সাহাবী ]
২। জাবির ইবনে
আবদুল্লাহ (রা) [ সাহাবী ]
৩। আবদুল্লাহ ইবন
আব্বাস (রা) [ সাহাবী ]
৪। হাসান আল বসরী
(রহ) [ তাবেয়ী ]
৫। ইকরিমা (রহ) [
তাবেয়ী ]
৬। ইব্রাহিম নখয়ী
(রহ) [ তাবেয়ী ]
৭। মায়মুন বিন
মাহরান (রহ) [ তাবেয়ী ]
৮। কাতাদাহ (রহ)
৯। সাঈদ বিন
জুবাইর (রহ)
১০। মুজাহিদ (রহ)
নীচের কিতাবগুলোতে এই দলীল পাবেন :
[ মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা ,
আল
মুস্তাদরাক হাকিম, বায়হাকী , দুররুল মানসুর , কবির , নুকাত ওয়াল
ঊউন , তফসীরে ইবনে
কাসির , তাফসিরে
কুরতুবী , তাফসীরে
বায়জাবী , তাফসীরে আদিল , তফসীরে খাজিন , তাফসীরে তাবারী , মাআরাফুল কোরান
]
কুরআন মজীদের অন্য আয়াতে আছে,
ইবলিস-শয়তান
আদম সন্তানকে ধোঁকা দেওয়ার আরজী পেশ করলে আল্লাহ তাআলা ইবলিসকে বললেন,
“তোর আওয়াজ
দ্বারা তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস পদস্খলিত কর।” -সূরা ইসরা : ৬৪
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যে সকল বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তাই ইবলিসের
আওয়াজ। বিখ্যাত তাবেয়ী
মুজাহিদ রাহ. বলেন, ইবলিসের আওয়াজ
বলতে এখানে গান ও বাদ্যযন্ত্রকে বোঝানো হয়েছে। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যেসব বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তার মধ্যে
গান-বাদ্যই সেরা। এজন্যই একে ইবলিসের
আওয়াজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
-ইগাছাতুল
লাহফান ১/১৯৯
একবার রাসুল {সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওসাল্লাম} এর বিশিষ্ট
সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাজিঃ) ইরাকের কুফা শহরের কোন এক জনপদ দিয়ে
হেটে যাচ্ছিলেন, পথিমধ্যে
একস্থানে কিছু দুষ্টলোকের একটি আড্ডাখানা দেখতে পান, যেথায় গান-বাজনা, মদ্যপান
ইত্যাদির মাধ্যমে আসর সরগরম ছিল।
এতে
যাযান নামক এক গায়ক অত্যন্ত মধুর সুরে গান করছিল। যাযানের মিষ্টিসুর যখন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাজিঃ)
শুনতে পেলেন, তখনই বলে উঠলেন, আহা কি মধুর আওয়াজ! আফসুস! এই আওয়াজ দিয়ে যদি পবিত্র
কোরআন তিলাওয়াত করা হত?
একথা বলেই তিনি স্বীয় চাদর দিয়ে মাথা ডেকে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। যাযান এরকম মন্তব্য শুনে তার সাথী-সঙ্গীদের জিজ্ঞাসা করল, উনি কে? জবাবে সাথীরা
বলল: ইনি আল্লাহর রাসুল {সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওসাল্লাম} এর বিশিষ্ট
সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাজিঃ)।
তিনি
তোমার সুললিত কন্ঠ শুনে এমন মন্তব্য করে গেলেন। কথা শুনেই যাযানের মনের জগতে এক বিপ্লব ঘটে গেল। সে তাৎক্ষণিক সমূহ বাদ্য-যন্ত্র ভেঙ্গে চুরমার করে সোজা
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের দরবারে উপস্থিত হয়ে অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগল। যাযানের এ পরিবর্তন দেখে রাসুলের সাহাবী ইবনে মাসউদ
(রাজিঃ) তাকে বুকে টেনে নেন এবং নিজেও কাঁদতে থাকেন। অতঃপর বলেন: আমি কেন এমন ব্যক্তিকে ভালবাসব না, যাকে আল্লাহ তায়ালা কবুল করেছেন। এবং সে বাদ্য-যন্ত্র থেকে তওবা করেছে। অবশেষে যাযান হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাজিঃ)
সংস্পর্শে থেকে কোরআন-হাদীসের ইলম অর্জন করে যুগের প্রসিদ্ধ একজন আলেমে পরিণত হন। (গুনয়্যাতুত তালিবীন)
বস্তুত গান বাজনার ক্ষতিকর প্রভাব এত বেশি যে, তা নাজায়েয হওয়ার জন্য আলাদা কোনো দলীল খোঁজার প্রয়োজন
পড়ে না। এতদসত্ত্বেও
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বহু হাদীসের মাধ্যমে তা প্রমাণিত।
হাদীসের দলীল:
হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত,
হুজুর
(স.) ইরশাদ করেন, গান মানুষের
অন্তুরে মুনাফেকির জন্ম দেয় যেমন পানি শস্য উৎপাদন করে। - বায়হাকী, মিশকাত : 411
সাহাবী ও তাবেয়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী বহু গুনাহর সমষ্টি হল গান ও বাদ্যযন্ত্র। যথা :
ক) নিফাক এর উৎস খ) ব্যভিচারের প্রেরণা জাগ্রতকারী গ) মস্তিষ্কের উপর আবরণ
ঘ) কুরআনের প্রতি অনিহা সৃষ্টিকারী ঙ) আখিরাতের চিন্তা নির্মূলকারী চ) গুনাহের
প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টিকারী ও ছ) জিহাদী চেতনা বিনষ্টকারী। -ইগাছাতুল লাহফান ১/১৮৭
যারা আমাদের শিশু কিশোর-কিশোরীদের হাতে তবলা-সারিন্দা-হারমুনিয়াম ইত্যাদি
তাল দিচ্ছে তাদের নামও কিন্তু আব্দুল্লাহ, আব্দুর রহআন, আয়েশা, খাদিজা।
কাজেই
অত্যন্ত দরদমাখা কন্ঠে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, নিম্নের হাদিসগুলি গভীরভাবে, মনযোগ সহকারে পাঠ করুন, আপনার আমার প্রিয় নবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ
ليكونن
من أمتي أقوام يستحلون الحر والحرير والخمر والمعازف
”নিশ্চয়ই আমার
উম্মতের মধ্যে এমন ব্যক্তিদের আগমণ ঘটবে, যারা যিনা, রেশম, শরাব এবং বাদ্য-যন্ত্রকে হালাল মনে করবে। (বুখারী শরীফ)
(يستحلون শব্দের অর্থ হল : শরিয়তে
হারামকৃত জিনিষকে হালাল মনে করা)
এর চেয়ে ও কঠিন সতর্কবাণী, অধিক ভয়াবহ
এবং অপমানজনক শাস্তি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে, যারা গান-বাদ্যযন্ত্রে নিজে ডুবে গেছে এবং অন্যকে ও ডোবাচ্ছে।
ইবনু আবিদ্দুনিয়া ”কিতাবুল মালাহী”তে মারফু’
হাদিসে
হযরত আবু হুরাইরাহ (রাযি) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসুল {সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম} ইরশাদ করেনঃ
”শেষ যামানায়
এই উম্মতের কিছু সংখ্যক লোকদের ”মাছখ” (আকৃতি পরিবর্তন) করে বানর ও শুকরের আকৃতি করে দেয়া হবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ওরা কি একথার সাক্ষি দিবেনা যে, এক আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং হযরত মোহাম্মদ {সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম} আল্লাহর রাসুল? তিনি {রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম} উত্তরে বলেনঃ
কেন নয়? বরং ওরা তো
রোজা ও রাখবে, নামাজ ও পড়বে
এবং হজ্জ ও করবে। সাহাবায়ে
কিরাম জিজ্ঞাসা করেন, এতদসত্বেও ওদের
অবস্থা এমন কেন হবে?
রাসুল {সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওসাল্লাম} বলেন: ওরা
বাদ্যযন্ত্র-তবলা এবং নাচ-গান করবে,
শুধু
তাই নয় বরং ওরা গায়ীকা নারীদের পর্যন্ত আপন করে নিবে। অতঃপর মদ্যপান করবে, মাতাল অবস্থায় রাত্রিযাপন করবে, আর এমন অবস্থায় যখন ভোর হবে,
তখন
তাদের চেহারা বিকৃত করে বানর এবং শুকরের আকৃতি বানিয়ে দেয়া হবে।
(আউনুল মা’বুদ শারহে
আবিদাউদ, রেশম অধ্যায়)
গান-গায়িকা এবং এর ব্যবসা ও চর্চাকে হারাম আখ্যায়িত করে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন –
হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল {সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওসাল্লাম} ইরশাদ করেন, যখন জেহাদলব্দ সম্পদকে ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করা হবে, যখন গচ্ছিত বস্তুকে লুটের মাল গণ্য করা হবে, যাকাতকে জরিমানার মত কঠিন মনে করা হবে, যখন দ্বীন ভিন্ন অন্য উদ্দেশ্যে শিক্ষা অর্জন করা হবে, যখন মানুষ স্ত্রীর আনুগত্য ও মাতার অবাদ্যতা শুরু করবে, যখন বন্ধুকে নিকটে টেনে নিবে ও পিতাকে দূরে সরিয়ে রাখবে, যখন মসজিদসমূহে হট্টগোল হবে, যখন পথচারী কুকর্মী ব্যক্তি গোত্রের নেতা হবে, যখন নীচতম ব্যক্তি তার স¤প্রদায়ের প্রধান হবে, যখন লোকদের
সম্মান করা হবে তাদের অনিষ্টের ভয়ে,
যখন
গায়িকা নারী ও বাদ্য-যন্ত্রের ব্যাপক প্রচলন হবে, যখন মদ্যপান শুরু হবে, যখন মুসলিম স¤প্রদায়ের পরবর্তীলোকগণ পূর্ববর্তীগণকে অভিসম্পাত করবে, তখন তোমরা প্রতিক্ষা কর একটি লালবর্ণযুক্ত বায়ুর, ভূমিকম্পের,
ভূমিধ্বসের, আকার-আকৃতি বিকৃতি হয়ে যাওয়ার এবং কেয়ামতের এমন
নিদর্শন সমূহের যেগুলো একের পর এক প্রকাশ হতে থাকবে, যেমন কোন মালার সূতা ছিড়ে গেলে দানা গুলো একের পর এক খসে পড়তে থাকে। ( তিরমিযী শরীফ)
অন্য এক হাদিসে এসেছে, হযরত আবু উমামা
(রাজিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল {সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম} ইরশাদ করেন : তোমরা গায়িকা নারীদের বেচা-কেনা করো না, ওদেরকে গান শিক্ষা দিও না, ওদের ব্যবসায় কোন প্রকার কল্যাণ নেই, ওদের উপার্জিত পয়সা হারাম, আর ওদের
ক্ষেত্রেইতো পবিত্র কোরআনের এই আয়াত {
وَمِنْ
النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ } অবতীর্ণ হয়েছে।
(জামে তিরমিযী হাদীস : ১২৮২;
ইবনে
মাজাহ হাদীস : ২১৬৮)
উপরোক্ত হাদিস দ্বারা বুঝা যায় বাদ্যযন্ত্রেও বাণিজ্য ও শিক্ষা দেওয়া
সম্পূর্ণ হারাম।
হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুল {সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওসাল্লাম} ইরশাদ করেছেন
যে, মহান আল্লাহ আমাকে জগদ্বাসীর জন্য রহমত ও বরকত এবং
হিদায়ত ও পথপ্রদর্শক হিসাবে প্রেরণ করেছেন।
আর আমার
সেই প্ররাক্রমশালী প্রভু আমাকে সর্বপ্রকারের ঢোল তবলা, যাবতীয় বাদ্যযন্ত্র, মূর্তিপূজা, শূলি ও ক্রুশ
থেকে এবং জাহেলী যুগের কুপ্রথা ও কুসংস্কার নির্মূল ও ধংস সাধনের নির্দেশ দিয়েছেন।
(ইমাম আহমাদ, সূত্র :
মিশকাতুল মাসাবিহ, ২/৩১৮)
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, গানবাজনা মানুষের অন্তরে মুনাফেকী উৎপাদন করে যেমন পানি
শস্য উৎপাদন করে থাকে। (মিশকাত ২/৪১১)
অন্য এক হাদিসে এসেছেঃ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, পানি যেমন (ভূমিতে) তৃণলতা উৎপন্ন করে তেমনি গান মানুষের অন্তরে নিফাক
সৃষ্টি করে।
-ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৩; তাফসীরে
কুরতুবী ১৪/৫২
উপরোক্ত বাণীর সত্যতা এখন দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার। গান-বাজনার ব্যাপক বিস্তারের ফলে মানুষের অন্তরে এই
পরিমাণ নিফাক সৃষ্টি হয়েছে যে, সাহাবীদের
ইসলামকে এ যুগে অচল মনে করা হচ্ছে এবং গান-বাদ্য, নারী-পুরুষের মেলামেশা ইত্যাদিকে হালাল মনে করা হচ্ছে।
বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত নাফে’ রাহ. থেকে সহীহ
সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার চলার পথে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বাঁশির আওয়াজ
শুনলেন। সঙ্গে সঙ্গে
তিনি দুই কানে আঙ্গুল দিলেন।
কিছু
দূর গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে নাফে’! এখনো কি আওয়াজ শুনছ? আমি বললাম হ্যাঁ। অতঃপর আমি যখন
বললাম, এখন আর আওয়াজ
শোনা যাচ্ছে না তখন তিনি কান থেকে আঙ্গুল সরালেন এবং বললেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলার
পথে বাঁশির আওয়াজ শুনে এমনই করেছিলেন।
-মুসনাদে
আহমদ হাদীস : ৪৫৩৫; সুনানে আবু
দাউদ হাদীস : ৪৯২৪ বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. থেকেও এমন একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।-ইবনে মাজাহ হাদীস : ১৯০১
একটু ভেবে দেখুন তো, যে আওয়াজ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম মুহূর্তের জন্যও
কানে তুলতে রাজি ছিলেন না সেই ইবলিসী আওয়াজের অনুকূলে কথা বলার দুঃসাহস আমরা
দেখাতে পারি কি না?
বাজনাদার নুপুর ও ঘুঙুরের আওয়াজও সাহাবায়ে কেরাম বরদাশত করতেন না। তাহলে গান ও বাদ্যযন্ত্রের প্রশ্নই কি অবান্তর নয়?
নাসাঈ ও সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত আছে, একদিন হযরত আয়েশা রা.-এর নিকট বাজনাদার নুপুর পরে কোনো বালিকা আসলে আয়েশা
রা. বললেন, খবরদার, তা কেটে না ফেলা পর্যন্ত আমার ঘরে প্রবেশ করবে না। অতঃপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ঘরে ঘণ্টি থাকে সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।-সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৪২৩১; সুনানে নাসাঈ হাদীস : ৫২৩৭
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ঘণ্টি, বাজা, ঘুঙুর হল শয়তানের বাদ্যযন্ত্র।-সহীহ মুসলিম হাদীস : ২১১৪
মৃদু আওয়াজের ঘণ্টি-ঘুঙুরের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আধুনিক সুরেলা
বাদ্যযন্ত্রের বিধান কী হবে তা খুব সহজেই বুঝা যায়।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন , আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পাল্টিয়ে তা পান করবে
এবং বাদ্যযন্ত্র সহকারে গান করবে ।
আল্লাহ
তাআলা তাদের ভুগর্ভে বিলীন করে দিবেন এবং কতকের আকৃতি বিকৃত করে বানর ও শুকরে
পরিনত করে দিবেন ।
[ সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪০২০ ,
সহীহ
ইবনে হিব্বান : ৬৭৫৮ , আততিরমিযি
বর্ণিত হাদীস নং-২২১২, জামিহ আল কাবির
বুখারী কৃত , সুনানে
বায়হাকী , মুসান্নাফে
ইবনে শায়বা , আল মুজাম
তাবরানী কৃত , বগভী, আদ দানি ,
আল
সিলসিলাহ আস-সহীহাহ- ২২০৩, দাম আল মালাহী; ইবনে আবি দুনিয়া সহ আরো অনেক হাদীস গ্রন্থে বর্নিত
হয়েছে]
“আমি দুটো ফাসেক, মুর্খ নিকৃষ্ট আওয়াজ থেকে বাধা দেই । যার একটি হচ্ছে গান বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ …।”
[ আত তাহাবী , আল বাজ-জার , আল বাগভী ,
বায়হাকী
, ইবনে আবি আদ দুনিয়া , আল হাকিম, আবু ইয়ালা , তিরমিযী এটাকে হাসান হাদিস বলেছেন ]
দুই ধরণের আওয়াজ দুনিয়া আখেরাত তথা উভয় জাহানে অভিশপ্ত। এক গানের সঙ্গে বাদ্যের মিশ্রন। দুই বালামুশিবতে বিলাপ। (বায়হাকী)
রাসুল (সঃ) ইরশাদ করেন: আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক আসবে যারা
ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ এবং বাদ্যযন্ত্রকে বৈধতা দেবে। (আল বুখারী বর্ণিত, দেখুন আল ফাতহ, ১০/৫১)।
যারা গান-বাদ্য করে অথবা যাদের ঘরে এগুলোর ব্যবহার হয় তাদের উভয়ের উপরই
অভিশাপ (বায়হাকী)
শয়তান অভিশপ্ত হয়ে যখন আসমান থেকে নামে তখন যে আরজ করে, হে আল্লাহ তুমি তো আমাকে অভিশপ্ত করলে এখন তুমিই বলে দাও, আমার এলেম কি হবে? আল্লাহ তায়লা বলেন, তোমার এলেম
হলো- যাদু, এরপর শয়তান আরজ
করল আমার পছন্দনীয় আওয়াজ কী হবে? আল্লাহ তায়লা
বলেন, গান-বাজনা। যে ব্যক্তি গান শুনার উদ্দেশ্যে গইকাদের মজলিসে বসে
আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার কানে শিশা ঢেলে দিবেন। (তিরমিযি)
হযরত ইবনে আব্বাস রাযি, থেকে বর্ণিত
হুজুর (সঃ) ইরশাদ করেন- কিয়ামতের দিন স্বয়ং আল্লাহ তায়লা ঘোষনা করবেন, ঐ সকল ব্যক্তিরা কোথায় যারা গানের আশর ও গান শ্রবন থেকে
নিজেদের চক্ষু ও কর্ণকে হেফাজত করেছ।
অত:পর
ফেরেস্তা তাদের মজমা থেকে পৃথক করে নিয়ে মেশক আম্বরের টিলার উপর বসিয়ে দিবেন। এবং ফেরেস্তারা আল্লাহর এমন মহিমা কীর্তন করে শুনাবে যে
শ্রোতাগন ইতিপূর্বে এত সুন্দর চমৎকার আওয়াজ আর কোন দিন শুনেনি। (দায়লামী)
সাহাবী বারাহ ইবনে সালেকের রা. কন্ঠস্বর ছিল মধুর। কোন কোন সফরে রাসূলের সা. সাথেচলার সময় ধর্মীয় গান
গাইতেন। একদা যখন তিনি
গান গাচ্ছিলেন, আর মহিলারা
নিকটে এসে পড়ল, তখন রাসূল সা.
তাকে বললেন:মেয়েদের থেকে সাবধান! ফলে তিনি নিশ্চুপ হয়ে পড়লেন। তার স্বর মেয়েরা শ্রবণ করুক তা রাসূল সা. পছন্দ করেন নি। (হাকেম)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার উম্মতের মধ্য হতে একদল লোক এমন হবে যারা ব্যভিচার, রেশমি বস্ত্র পরিধান, মদ পান এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি হালাল মনে করবে। এবং কিছু লোক এমন হবে যারা একটি পর্বতের নিকটে অবস্থান
করবে এবং সন্ধ্যাবেলায় তাদের মেষপালক তাদের নিকট মেষগুলো নিয়ে আসবে এবং তাদের
নিকট কিছু চাইবে, কিন্তু তারা
বলবে, ‘আগামীকাল ফেরত
এসো’। রাতের বেলায় আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন
এবং তাদের উপর পর্বত ধ্বসিয়ে দিবেন,
বাকি
লোকদেরকে তিনি বানর ও শূকরে পরিণত করে দিবেন এবং শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত তারা এই
অবস্থায় থাকবে”।
[বুখারী, ভলিউম ৭, বুক ৬৯,সংখ্যা৪৯৪]
এই হাদীসে উল্লেখ হচ্ছে বাদ্যযন্ত্র হারাম, এবং উলামাগণের মধ্যে এই ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। ইবন আল-কাইয়্যিম (রাহিমুল্লাহ) তাঁর বই ইগাছাতুল লাহফান
এ বলেন, “যখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘বৈধ মনে করবে’, তার মানে তিনি
বুঝিয়েছেন এটা অবৈধ, এরপর লোকেরা
একে বৈধ বানিয়েছে ”।
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, নিশ্চয় আল্লাহু রাববুল আলামিন হারাম করে দিয়েছেন আমার
উম্মতের উপর মদপান করা, জুয়া খেলা,বাশিঁ বাজানো,তবলা ও বাদ্যযন্ত্র।
আমার
জন্য বৃদ্ধি করে দিয়েছেন বিতিরের নামাজ।
বিখ্যাত
মুহদ্দিস ইয়াজিদ বলেন, হাদিসে কাইনান
বলতে বাদ্যযন্ত্রকে বুঝানো হয়েছে।
(মুসনদে আহমদ ২য় খন্ড পৃ:১৬৫)
হযরত আবদুর রহমান ইবনে ছাবেত (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলে করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ
করেন আমার উম্মতে ‘ষুসুফ’তথা জমিন ফেটে ঢুকাই ফেলা ‘ক্বুযুফ’ তথা পাথর বর্ষন
মুসান্নাহ তথা চেহারা পাল্টানো হবে সাহাবারা জি…সা করলেন তা কখন হবে ইয়া রাসুলুল্লাহ ? রাসুল (সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন বাদ্যযন্ত্র প্রকাশ্য করবে এবং মদকে হালাল করে দেবে।
(আবু দাউদ ২য় খন্ড পৃষ্ঠা-১৬৩)
হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) থেকে
বর্ণিত তিনি বলেন , রাসুলে খোদা
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এরশাদ করেন আমি প্রেরিত হয়েছি বাদ্যযন্ত্রকে
ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য।অতঃপর রাসুল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, গায়ক গায়িকার জীবিকা (গানের মাধ্যমে) হারাম এবং ব্যাবিচারের জীবিকা হারাম। যে শরীর হারাম দ্বারা গঠিত তাকে আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।
(কানজুল উম্মাল ১৫তম খন্ড পৃষ্ঠা ২২৬)
উপরোক্ত হাদিস দ্বারা বুঝা যায়,
গান
বাজনার মাধ্যমে যে টাকা পয়সা অর্জন করে এবং যারা গান বাজনার অনুষ্ঠান করায় এবং
তাতে যে টাকা ব্যয় করে তা হারাম।
হযরত আবু মুছা আল আশইয়ারী (রাহমাতুল্লাহু আলাইহি )থেকে বর্ণিত রাসুল
(সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন যার দুনিয়ার মধ্যে গান বাজনা শুনবে
তাদেরকে জান্নাতে গানের অনুষ্ঠান শুনার অনুমতি দেওয় হবে না অর্থাৎ জান্নাতে
প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে না।
(কানজুল উম্মাল ১৫তম খন্ড)
হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (স.) মদ, জুয়া, কুবা এবং গুবাইরা প্রভৃতিকে নিষেধ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, নেশা সৃষ্টিকারী সব জিনিষই হারাম।
- আবু
দাউদ, মিশকাত : 318
- কুবা বলা হয় দাবা খেলা অথবা ছোট তবলাকে। গুবাইরা একটি বিশেষ ধরনের মদ। হাবশী লোকেরা যা চনা থেকে তৈরি করে।
হযরত আবু মালেক আশআরী থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের
মধ্যে এমন একদল লোকের আবির্ভাব ঘটবে যারা রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্র হালাল মনে করবে।
- ইবনে
মাজাহ্, ফতোয়া মাওলানা
আব্দুল হাই লাখনভী : 2/8
২। হযরত জাবের (রা
বলেন , গান বাজনা থেকে
সতর্ক থাক । কেননা , তা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়… এবং শয়তান ছাড়া আর কেউ গান করে না [ ওমদাতুল কারী ]
৩। হযরত ওমর (রা
এক দল ব্যক্তির পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলেন ।
তিনি
দেখলেন এক ব্যক্তি গান করছে , বাকীরা বসে
শুনছে । তখন তিনি বললেন
– “আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা তোমাদের শ্রবনের যোগ্যতা নষ্ট
করে দিন , অর্থ্যাৎ
তোমাদের বধির হয়ে যাওয়াই শ্রেয় ।
[ এত্বেহাফ
]
৫। ইবনে আব্বাস
(রা: ) বলেন “ড্রাম নিষিদ্ধ , দফ নিষিদ্ধ ,
যেকোন
বাদ্যযন্ত্র নিষিদ্ধ ( এমনকি ) বাশীও নিষিদ্ধ । [ বায়হাকী ]
মাজহাবের দলীল:
ইমাম আবু ইউসুফ , ইমাম মুহাম্মদ , ইমাম শাফী ,
ইমাম
মালিক এবং ইমাম আহমদ মত দিয়েছেন যে কেউ যদি কারো বাদ্যযন্ত্র ভেঙে ফেলে তাহলে সে
দায়ী হবে না ( যেহেতু গান বাজনা নিষেধ ) এবং কারো জন্য বাদ্যযন্ত্র ক্রয়-বিক্রয়
করা জায়েজ নয় । [ উমদাতুল কারী ]
৭৭ জন বিজ্ঞ আলেম গান হারাম হওয়া সম্বন্ধে একমত হয়েছেন । [ ফতোয়ায়ে আজিজিয়া ]
গান সমস্ত মানুষকে কবিরা গোনায় লিপ্ত করে [ বাহরোর রায়েক ]
যাবতীয় প্রকার গান-বাজনা হারাম এমনকি কাঠের ওপর আংগুল দিয়ে আঘাত করে গান
গাওয়াও হারাম [ হেদায়া ]
গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক,
ইমাম
শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-অভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। সকলেই গান-বাদ্যকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ইমাম মালেক রাহ. কে গান-বাদ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কেবল ফাসিকরাই তা করতে পারে। -কুরতুবী ১৪/৫৫
ইমাম শাফেয়ী রাহ. বলেছেন যে,
গান-বাদ্যে
লিপ্ত ব্যক্তি হল আহমক।
তিনি আরো বলেন, সর্বপ্রকার
বীণা, তন্ত্রী, ঢাকঢোল, তবলা, সারেঙ্গী সবই হারাম এবং এর শ্রোতা ফাসেক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না।
-ইগাছাতুল লাহফান ১/১৭৯; কুরতুবী ১৪/৫৫
হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ আল্লামা আলী মারদভী লেখেন, বাদ্য ছাড়া গান মাকরূহে তাহরীমী। আর যদি বাদ্য থাকে তবে তা হারাম।
-আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৩৮৮
ইমাম শাফেয়ী রাহ. শর্তসাপেক্ষে শুধু ওলীমা অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশ আছে
বলে মত দিয়েছেন। কেননা বিয়ের
ঘোষণার উদ্দেশ্যে ওলীমার অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশের বর্ণনা হাদীসে রয়েছে। -জামে তিরমিযী হাদীস : ১০৮৯; সহীহ বুখারী হাদীস : ৫১৪৭, ৫১৬২
মনে রাখতে হবে, এখানে দফ
বাজানোর উদ্দেশ্য হল বিবাহের ঘোষণা,
অন্য
কিছু নয়। -ফাতহুল বারী
৯/২২৬
আল্লামা শমসুদ্দীন ছরখাসী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন,
ঐ গায়কের স্বাক্ষী গ্রহণ যোগ্য নয় , যে তাঁর গানের মাধমে, মানুষ কে
একত্রিত করে এবং মানুষ তাঁর দিকে ছুটে আসে।
১৬তম খন্ড পৃষ্টা নং ১৩২[মসবুত]
আল্লামা কামাল উদ্দীন ইবনে হুমাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন,
হ্যাঁ যে সমস্ত কছিদা বা গজল বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে পড়া হয় যদি ও বা ঐ গজলে
নছিহত ও হিকতমত রয়েছে তবুও তা নিষেধ করা হবে। নিষেধ করাটা বাদ্যযন্ত্রের কারণে গজলের কারণে নয়। [ফত্হুল কদির ]
ফতোয়া-এ-আলমগীরী তে রয়েছে,
ইমাম শমসুল আয়িম্মা হালওয়ানী বলেন,গান শ্রবণ করা এবং আমাদের দেশের ভন্ড সুফিদের নাচ-গান সব হারাম। সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা করা ও বসা হারাম, কেননা গান ও বাদ্যযন্ত্র দুটোরই এক হুকুম। [ আলমগীরী ]
আল্লামা ইবনে নুজাইম মিশরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন,
ইমাম ফকিহ বযযাবী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তাঁর মানাকেবে উল্লেখ করেন, গান যখন বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে গাওয়া যাবে তখন হারাম হওয়ার ব্যাপারে আলেম
সমাজ ঐক্য মতক পোষন করেছেন।
বাদ্যযন্ত্র
ছাড়া গাওয়ার মধ্য মতানৈক্য রয়েছে।
ব্যাখ্যা
কারীরা ব্যাখ্যা দেন নাই। হ্যাঁ ‘‘নেহায়া ’’
ও ‘‘ইনায়া’’ নামক কিতাবে
রয়েছে বিনোদনের জন্য গান করা প্রত্যেক ধর্মে হারাম। এবং ইমাম মুহাম্মদ রাহমাতুল্লাহু আলাইহি তার প্রসিদ্ধ ‘‘যিয়াদাত’’
নামক
কিতাবে বলেন, যেসমস্ত অছিয়ত
আমরাও আহলে কিতাবদের মতে হারাম তার মধ্যে গায়ক ও গায়িকার গানের ব্যাপাওে অছিয়ত
করাও অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ মারা
যাওয়ার পর তার পাশে বা কবরে গান গাওয়ার অছিয়ত করা যাবে না। আর যখন গান গাওয়ার ব্যাপারে ইমাম মুহাম্মদ (র) এর স্পষ্ট
ইবারত রয়েছে। সে ক্ষেত্রে
উনার মাযহাব অবলম্বিদের মতানৈক্যের কোন অবকাশ থাকে না।
[ বাহরুর রায়েখন্ড-৭ পৃষ্টা ৮৮-৮৯
ইমাম ইবন তাইমিয়া (রাহিমুল্লাহ) বলেন, “যে সকল কাজ শয়তানের পথকে শক্তিশালী করে তাদের মধ্যে গান বাজনা শোনা এবং
অন্যায় হাসি তামাশা অন্যতম।
এটা সেই
কাজ যা কাফেররা করত। আল্লাহ তায়ালা
বলেন “(এ ঘরের পাশে)
তাদের (জাহেলী যুগের)নামায তো কিছু শিষ দেয়া ও তালি বাজানো ছাড়া কিছুই ছিল না”[সূরা আল আনফাল ৮-৩৫]। ইবন আব্বাস,
ইবন উমর, আতিয়্যাহ,
মুজাহিদ, আদ-দাহাক,
আল
হাসান এবং ক্বাতাদাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘মু’কান’ অর্থ শিষ বাজানো, ‘তাসদিয়াহ’ অর্থ তালি
বাজানো। এটা মুশরিকদের
উপাসনার পথ। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাগণ আল্লাহর ইবাদত করেছেন, তাঁর( আল্লাহর) আদেশ অনুসারে, তাদের ইবাদতে ছিল কুরআন তিলাওয়াত ও যিকর(দু’আ)।
এমনটা
কখনো হয়নি যে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাগণ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)
গান-বাজনা শোনার জন্যে সমবেত হয়েছেন এবং যার সাথে তালি বাজানো হত অথবা ঢোল
ব্যবহার করা হত”।
ইমাম ইবন তাইমিয়া (রাহিমুল্লাহ) আরো বলেন সেই ব্যক্তির সম্পর্কে যার
স্বভাব হল গান-বাজনা শোনা, “ সে যখন কুরআন
তিলাওয়াত শ্রবণ করে তখন সে আবেগাপ্লুত হয় না, অপরদিকে সে যখন শয়তানের বাদ্যযন্ত্র (গান-বাজনা) শ্রবণ করে, সে নেচে উঠে।
যদি সে
সালাত প্রতিষ্ঠা করে, তবে সে হয় বসে
বসে তা আদায় করে অথবা মুরগী যেভাবে মাটিতে ঠোকর দিয়ে শস্যদানা খায় সেভাবে
দ্রুততার সাথে আদায় করে। সে কুরআন
তিলাওয়াত শ্রবণ করতে অপছন্দ করে এবং তাতে কোন সৌন্দর্য খুঁজে পায় না। তার কুরআনের প্রতি কোন রুচি নেই এবং যখন তা পড়া হয় সে
এর প্রতি কোন টান বা ভালোবাসা অনুভব করে না।
বরং, সে মু’কা ও তাসদিয়া
শুনে মজা পায়। এগুলো শয়তানী
আনন্দ এবং সে তাদের অন্তর্ভুক্ত যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে একটি শয়তান নিযুক্ত করে দেই, অতঃপর সেই সর্বক্ষণ তার সাথী হয়ে থাকে”।
[৪৩-৩৬] [আউলিয়া আর রাহমান]
ইমাম ইবন আল-কাইয়্যিম (রাহিমুল্লাহ) বলেন, “ আল্লাহর শত্রু শয়তানের কৌশলসমূহের মধ্যে একটি হল মুকা ও তাসদিয়া, এই ফাঁদ সে ঐ সকল লোকের জন্য পাতে যারা দীনের প্রতি
বুদ্ধিমত্তা,জ্ঞান,অথবা আন্তরিকতায় নিরাসক্ত। এই গাফেল(মূর্খ) লোকেরা গান-বাজনা শ্রবণ করে এবং
বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে, যা নিষিদ্ধ এবং
যার ফলে কুরআনের প্রতি তাদের অন্তর বিমুখ হয়ে যায়। তাদের হৃদয় পাপাচারের প্রতি উদাসীন ও আল্লাহর অবাধ্য। গান-বাজনা(সঙ্গীত) শয়তানের কুরআন এবং ব্যক্তি ও আল্লাহর
মাঝের দেয়াল। এটা সমকামিতা ও
ব্যভিচারের পথ। যে অন্যায়
ভালোবাসার সন্ধান করে ও স্বপ্ন দেখে সে এতে সান্ত্বনা খুঁজে পায়। গান-বাজনার প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে ও একে তাদের চোখে
শিল্প হিসেবে দেখিয়ে শয়তান দুর্বলচিত্তের মানুষদের ফাঁদে ফেলে। শয়তান তার অনুসারীদের সঙ্গীতের সৌন্দর্যের মিথ্যা দলীল
দেখায়। এই লোকগুলো
শয়তানের ওহী গ্রহণ করে এবং ফলস্বরুপ কুরআন ত্যাগ করে।
যখন আপনি তাদের গান-বাজনা শোনা অবস্থায় দেখেন, তাদেরকে বিনয়াবত,অলসভাবে বসা,নীরব নিশ্চুপ
অবস্থায় পাবেন; তাদের অন্তর
দিয়ে তারা মনোযোগ দেয় এবং চরমভাবে গান বাজনা উপভোগ করে। তাদের অন্তর গান বাজনায় এতটা নৈকট্য পায়, যেন তারা মাতাল।
তারা
নেচে উঠে এবং কুরুচিপূর্ণভাবে পতিতাদের মত অঙ্গভঙ্গি করে। এবং কেন নয় ? কারণ তারা সঙ্গীতে মত্ত মাতাল,
অনুরুপ
তাদের আচরণ। তারা আল্লাহর
জন্যে নয়, তারা শয়তানের
জন্য, এগুলো ঐ সকল
হৃদয় যা পাপাচারে নাজুক, এদের জীবন
আল্লাহর সন্তুষ্টি বাদে অন্য যেকোন কিছুর জন্য। তারা তাদের জীবন হাসি তামাশায় কাটায় ও দীনের প্রতি
তামাশা করে। শয়তানের
যন্ত্র তাদের নিকট কুরআন অপেক্ষা মধুর।
তাদের
কেউ যদি কুরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে, সে এতে সামান্যই প্রভাবিত হবে।
আর যদি
শয়তানের কুরআন শোনানো হয়, তারা অন্তরে
আনন্দ অনুভব করে এবং নিজের চোখেই তারা এটা দেখতে পায়। তাদের পা নাচে, হাত তালি বাজায়, নিঃশ্বাস ঘন
হয়ে আসে এবং সারা শরীর আনন্দ উপভোগ করে।
ওহে যে
এই ফাঁদে আটকে আছো ! যে আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানের নিকট বিক্রি হয়ে গেছো , কত বাজে তোমার এই কারবার ! যখন কুরআন শ্রবণ কর কেন তুমি
আনন্দ পাও না? যখন মহিমান্বিত
কুরআন তিলাওয়াত করা হয় তখন কেন শান্তি স্বস্তি পাও না ? হায়, সবাই তাই খুঁজে
যাতে সে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে, এবং শেষ
পর্যন্ত সত্যিই নিজেকে মানিয়ে নেয়”।
[ইগাছাতুল লাহফান]
শেখ আব্দুল আযীয বিন বায(রাহিমুল্লাহ) এর কাছে গান বাজনা সম্পর্কে জানতে
চেয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “এটা কি হারাম? আমি শুধু আনন্দের জন্যেই শুনি। রাবাবা(এক প্রকার গিটার) ও হারানো দিনের গান সম্পর্কে কি
বলেন? আর বিয়ে
শাদীতে ঢোল ব্যবহার সম্পর্কে?”
শেখ বিন বায বলেন, “ গান বাজনা শোনা
হারাম এবং পাপ। এটা হল সেই কাজ
যার ফলে আল্লাহর স্মরণ ও প্রার্থনা থেকে অন্তর দুর্বল করে দেয়। কুরআনের আয়াত “এবং সেই মানুষগুলো যারা অর্থহীন কথাবার্তা ক্রয় করে” [সুরা লুকমান ৩১-৬] , এখানে “অর্থহীন
কথাবার্তা” বলতে গান
বাজনাকে বোঝানো হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন
মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু), যিনি একজন
বিশিষ্ট সাহাবী, তিনি আল্লাহর
শপথ করে বলেছেন এর মানে হল গান।
আর গান
যদি রাবাবা এর সাথে হয়,উ’দ(আরবীয় গিটার), বাঁশি কিংবা ঢোলের সাথে হয়,
তবে তো
আরো বেশি হারাম। যে কোন গান, যেকোন প্রকার বাদ্যযন্ত্র সহকারেই হোক তা হারাম এবং
আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত। সুতরাং, মুসলমানদের এ ব্যাপারে সাবধান হওয়া উচিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার উম্মতের মধ্য হতে একদল লোক এমন হবে যারা ব্যভিচার, রেশমি বস্ত্র পরিধান, মদ পান এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি হালাল মনে করবে”[বুখারি]।
আমি
আপনাকে(প্রশ্নকর্তাকে) রেডিওতে কুরআনিক অনুষ্ঠান শোনার উপদেশ দিতে পারি, এভাবে একজন স্বস্তি খুঁজে পাবে এবং নিজেকে গান বাজনা
থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে।
আর
বিয়ে শাদীর ব্যাপারে দফ ব্যবহার করা যেতে পারে এমন কথার গানের সাথে যাকে পাপ বলা
যায় না। আর এটা রাতে
করা যেতে পারে, কেবলমাত্র
বিয়ে শাদীতে, কেবলমাত্র
মহিলাদের জন্যে এবং মহিলাদের দ্বারা।
এই
গীতসমূহ ইসলামিক বিয়ে ঘোষণার একটি অংশ।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ হতে তা প্রমাণিত। এবং ড্রামস তথা ঢোলের ক্ষেত্রে, তা সর্বক্ষেত্রে হারাম। দফ কেবলমাত্র বিয়ে শাদীতে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং
শুধুমাত্র মহিলাদের দ্বারা শুধুমাত্র মহিলাদের জন্যে”।
দফ-এর পরিচয়
এক প্রকার আরবীয় বাদ্যযন্ত্র,
দফ-এর
এক পাশ খোলা। বাজালে ঢ্যাব
ঢ্যাব আওয়াজ হয়। প্লাস্টিকের
গামলা বাজালে যেমন আওয়াজ হবে তেমন।
আসলে দফ
কোনো বাদ্যযন্ত্রের পর্যায়ে পড়ে না।
আওনুল
বারী গ্রন্থে দফ-এর পরিচয় দিতে গিয়ে লেখা হয়েছে যে, এর আওয়াজ স্পষ্ট ও চিকন নয় এবং সুরেলা ও আনন্দদায়কও
নয়। কোনো দফ-এর
আওয়াজ যদি চিকন ও আকর্ষণীয় হয় তখন তা আর দফ থাকবে না; বাদ্যযন্ত্রে পরিণত হবে - আওনুল বারী ২/৩৫৭ ।
আর দফ-এর মধ্যে যখন বাদ্যযন্ত্রের বৈশিষ্ট্য এসে যাবে তখন তা সর্বসম্মতিক্রমে
নাজায়েয বলে পরিগণিত হবে।
যারা সরাসরি আরবে দফ দেখেছেন,
তাদের
বর্ণনা থেকে জানা যায়, দফ-এর এক পাশ
খোলা। বাজালে ঢ্যাব
ঢ্যাব আওয়াজ হয়। প্লাস্টিকের
গামলা বাজালে যেমন আওয়াজ হবে তেমন।
আসলে দফ
কোনো বাদ্যযন্ত্রের পর্যয়ে পড়ে না।
আওনুল বারী গ্রন্থে দফ-এর পরিচয় দিতে গিয়ে লেখা হয়েছে যে, এর আওয়াজ স্পষ্ট ও চিকন নয় এবং সুরেলা ও আনন্দদায়কও নয়। কোনো দফ-এর আওয়াজ যদি চিকন ও আকর্ষণীয় হয় তখন তা আর দফ
থাকবে না; বাদ্যযন্ত্রে
পরিণত হবে। -আওনুল বারী
২/৩৫৭
আর দফ-এর মধ্যে যখন বাদ্যযন্ত্রের বৈশিষ্ট্য এসে যাবে তখন তা সর্বসম্মতিক্রমে
নাজায়েয বলে পরিগণিত হবে।
-মিরকাত ৬/২১০
এখন কেউ যদি বলেন, তৎকালীন যুগে
দফ ছিল আরবের সর্বোচ্চ বাদ্যযন্ত্র,
বর্তমানে
আধুনিকতার ছোঁয়ায় তা-ই উন্নত হয়েছে।
তাহলে
একে অজ্ঞতাপ্রসূত অবাস্তব কথা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারি না। কেননা একাধিক হাদীসে ঢোল, তবলাসহ অনেক বাদ্যযন্ত্রের নাম এসেছে। বাস্তবে না থাকলে এসব বাদ্যযন্ত্রের নাম আসবে কোত্থেকে? তাছাড়া মুহাদ্দিসদের ভাষ্য অনুযায়ী দফ বাদ্যযন্ত্রের
পর্যায়ে পড়ে না, যা ইতিপূর্বে
আমরা জেনেছি। আরবে এখনো দফ
বিদ্যমান আছে।
দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সুদানী উস্তাদকে ছাত্ররা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা
করলে তিনি বললেন, দফ তো
বাচ্চাদের জন্য, আর বড়দের জন্য
হল কুরআন। পরিণত
ব্যক্তিদের জন্য কুরআন ছেড়ে এসবের মধ্যে লিপ্ত হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। এরপরও যদি মেনে নেওয়া হয় যে, তৎকালীন যুগে দফ সর্বোচ্চ বাদ্যযন্ত্র ছিল তবে তাতেই বা
লাভ কী? বাদ্যযন্ত্রকে
তো আর জায়েয বানানো যাচ্ছে না।
হাদীসে
রাসূলই তাকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছে।
ইসলামকে
আধুনিক বানানোর সদুদ্দেশ্যে আজ কেউ কেউ ফতোয়া দিচ্ছেন যে, মেয়েদের সাথে হাত মেলানো জায়েয, নারী-পুরুষের মাঝে পর্দা বিধানের এত কড়াকড়ির প্রয়োজন নেই, গান-বাদ্য,
সিনেমা, টেলিভিশন এসব তো বিনোদনেরই অংশ। ক্লীন শেভে কোনো সমস্যা নেই, দাড়ি ইসলামের কোনো জরুরি বিষয় নয় ইত্যাদি বহুবিধ আধুনিক, অতি আধুনিক ফাতাওয়া আজ শুনতে পাওয়া যায়। মনে রাখা উচিত যে, ইসলাম অন্যান্য ধর্মের মতো নয়;
বরং তা
আল্লাহ প্রদত্ত চির আধুনিক আদর্শ, একে নিজেদের
পক্ষ থেকে আরো অতি আধুনিক বানানোর কোনো প্রয়োজন নেই। ইসলামে যেমন বাড়াবাড়ির অবকাশ নেই, তেমন ছাড়াছাড়িরও সুযোগ নেই। ইসলাম হল মধ্য পন্থা। যে বিধান যতটুকু দেওয়া প্রয়োজন আল্লাহ তাআলা তা ততটুকুই
দিয়েছেন। এর পূর্ণ
অনুসরণই যে সকল কল্যাণের সূত্র সাহাবায়ে কেরামের পুণ্যযুগই তার বাস্তব প্রমাণ। আমরাও যদি কল্যাণের প্রত্যাশা করি তাহলে আমাদেরকেও
ইসলামের সকল বিধানের পূর্ণ অনুসরণ করতে হবে এবং আমাদের ঈমান, আমল ও ফতোয়া সবকিছুকে যাচাই করতে হবে তাদেরই মানদণ্ডে।
আমরা কেউ তো এ দাবি করতে পারি না যে, সাহাবীদের চেয়ে ইসলামকে ও রাসূলের হাদীসকে চেপ্টা করে আমরা বেশি বুঝে
ফেলেছি।
বাদ্যসহ কাওয়ালি
সুফী সাধকের নাম ব্যবহারকারী একটি জগতেও আজ আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। তাই আধুনিক কিছু সুফী বলে থাকে, বাদ্যসহ যিকির ও কাওয়ালি জায়েয। দলীল হিসেবে তারা সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম এ বর্ণিত
দুটি বালিকার দফ বাজিয়ে কবিতা গাওয়ার হাদীসটি উপস্থাপন করে। এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. লেখেন, উক্ত হাদীসে আয়েশা রা.-এর বর্ণনাই তাদের অবাস্তব দাবির
বিরুদ্ধে উৎকৃষ্ট জবাব। গান-বাদ্য যে
নাজায়েয এই বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য হাদীসের রাবী হযরত আয়েশা রা. বলছেন, উক্ত বালিকাদ্বয় কোনো গায়িকা ছিল না। তারা কোনো গান গায়নি। -ফাতহুল বারী ২/৪৪২
ইমাম কুরতুবী রাহ. বলেন, গান বলতে যা
বুঝায়, বালিকাদ্বয় তা
গায়নি। পাছে কেউ ভুল
বুঝতে পারে তাই আয়েশা রা. বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
ইমাম কুরতুবী আরো বলেন, বর্তমানে
একশ্রেণীর সুফীরা যে ধরনের গান ও বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন ঘটিয়েছে তা সম্পূর্ণ হারাম।
-তাফসীরে কুরতুবী ১৪/৫৪
বিখ্যাত সাধক হযরত জুনাইদ বাগদাদী রাহ. তার যুগে কাওয়ালি শোনা বন্ধ করে
দিয়েছিলেন। লোকেরা
জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, বর্তমানে
কাওয়ালি শোনার শর্তগুলো পালন করা হয় না।
তাই আমি
এর থেকে তওবা করছি।
-আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৩৯২
জুনাইদ বাগদাদী রাহ.-এর যুগেরই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আমাদের যুগের অবস্থা
কেমন হবে তা ভাববার বিষয়। এক বিদ্যান
ব্যক্তি একটি শিক্ষণীয় উক্তি করেছিলেন যে, তোমরা আধুনিক হও ভালো কথা, কিন্তু আধুনিক
হতে গিয়ে মনুষ্যত্বের সীমানা অতিক্রম করো না এবং শয়তানের দোসর বনে যেও না।
ايَّاكُمْ
وَمُحْدَثاتِ الْاُمُوْرِ فاِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بدْعَةٍ وكُلُّ بِدْعًةٍ
ضَلالَةٍ (رواه الترمذي)
তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন কোন সংযোজন করা হতে বিরত থেক। কারণ, প্রতিটি নতুন
সংযোজনই বিদআত। আর প্রতিটি
বিদআতই গোমরাহী। (তিরমিযী)